তারকা খেলোয়াড়ের জ্ঞান হারানোয় চাপে পড়া ডেনমার্কের বিপক্ষে দারুণ জয় পেয়েছে কম শক্তির দল ফিনল্যান্ড।
প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে এসেই হারিয়ে দিল সাবেক চ্যাম্পিয়নদের।
এ জয় ফিনল্যান্ডবাসীর জন্য চমকই বটে। শক্তিমত্তায় দুদলের পার্থক্য অনেক। ফিফা র্যাকিংয়ে ডেনমার্কের অবস্থান ১০ নম্বরে, আর ফিনল্যান্ডের ৫৪।
এই জয় নিয়ে ডেনমার্কের সঙ্গে ২৩ বারের দেখায় মাত্র দুবার জিতেছে ফিনল্যান্ড।
তাদের আগের জয়টি ছিল সেই ২০০০ সালে।
ম্যাচটি ছিল ঘটনাবহুল। যেখানে ডেনমার্কের তারকা মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ানো এরিকসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং ম্যাচ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
পরে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৩০ মিনিটে আবারও শুরু হয় ম্যাচ।
আর সেই ম্যাচে ফিনল্যান্ডের কাছে ১-০ গোলে হেরে যায় ডেনমার্ক।
কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে শনিবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে আক্রমণাত্মক ফুটবলে শুরু থেকে ফিনল্যান্ডকে চেপে ধরে ডেনমার্ক।
অষ্টম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নিচু শট নেন ডেনমার্কের মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ানো এরিকসেন। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে তা ঠেকান গোলরক্ষক লুকাস হ্রাডেকি।
১৬তম মিনিটে আরেকটি দারুণ সেভ করে জাল অক্ষত রাখেন হ্রাডেকি। সতীর্থদের ক্রসে ডি-বক্সে মিডফিল্ডার হোয়বিয়ের্গের হেড এক হাতে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান। ১৯তম মিনিটে এরিকসেনের আরেকটি প্রচেষ্টা ফেরান তিনি।
এভাবে ডেনমার্কের একের পর এক প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন ফিনল্যান্ডের গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৪৩তম মিনিটে ঘটে যায় সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ফিনল্যান্ডের আক্রমণভাগের সামনে একটি থ্রো-ইন পেয়েছিল ডেনমার্ক। মিডফিল্ডার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের উদ্দেশ্যে থ্রো-ইনটি করেন সতীর্থ খেলোয়াড়। কিন্তু সেই বল আর রিসিভ করতে পারেননি তিনি।
বলের কাছে পৌঁছানোর জোর প্রচেষ্টা চালান তিনি। সর্বশক্তি দিয়ে পা বাড়াতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। মাঠে লুটিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন ডেনমার্কের এই তারকা ফুটবলার।
দৌড়ে আসেন সতীর্থরা। উৎকণ্ঠায় যার যার আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান দর্শক-সমর্থকরাও।
প্রাথমিকভাবে হার্টঅ্যাটাকের আশঙ্কা করে মেডিকেল টিম। টানা ১০ মিনিট ধরে সিপিআর দেওয়ার পরও স্ট্রেচারে করে তাকে মাঠের বাইরে নেওয়া হয়। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ডাকা হয়। এরই মধ্যে জ্ঞান ফেরে এরিকসেনের।
এমন পরিস্থিতিতে ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচটি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেন আয়োজকরা।
পরে উয়েফা জানায়, শঙ্কা কেটে গেছে, আপাতত বিপদমুক্ত এরিকসেন।
পরে বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৩০ মিনিটে আবারও শুরু হয় ম্যাচ। এরিকসেনের বদলি নামেন মাথিয়াস ইয়েনসেন।
দ্বিতীয়ার্ধে ডেনিশদের একটু উদাসীনতাপূর্ণ খেলা দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, তাদের মন সতীর্থ এরিকসেনের দিকেই ঝুঁকে আছে।
এরিকসেনের ঘটনার ধাক্কাটা যেন এলোমেলো করে দিল ডেনমার্ককে।
সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে প্রতিপক্ষ ফিনল্যান্ড।
৫৯ মিনিটে অপ্রতাশিতভাবেই লিড নেয় ফিনল্যান্ড। বাঁ দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখে হেডে বল জালে পাঠান জোয়েল।
সমতায় ফেরার সুযোগ ছিল ডেনমার্কের। ৭৩তম মিনিটে ইউসুফ পোলসেন প্রতিপক্ষের ডি-বক্সে ফাউলের শিকার হলে পেনাল্টি পায় ডেনমার্ক।
কিন্তু এরিকসেনের দুশ্চিন্তায় কাবু ডেনিশ দল সেই সুযোগটিও কাজে লাগাতে পারেনি।
স্পট কিকে হোয়বিয়ের্গের শট বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক।
রেফারির শেষ বাঁশিতে ১-০ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফিনল্যান্ড।
নিজেদের পরের ম্যাচে আগামী বুধবার রাশিয়ার মুখোমুখি হবে ফিনল্যান্ড। পর দিন বেলজিয়ামের বিপক্ষে খেলবে ডেনমার্ক।
ম্যাচ হাইলাইটস দেখুন—