নিজের ৪র্থ স্ত্রী হাসিনা বেগম ওরফে সুমিকে মাঠের মাঝ খানে নিয়ে একটি পাম্প ঘরে থাকতেন স্বামী আব্দুর রউফ (৪০)। অন্য স্ত্রীদের মত হাসিনাও তার বাড়িতে থাকতে চাওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আব্দুর রউফ স্ত্রীর গলা চেপে ধরেন। সেখানে অজ্ঞান অবস্থায় তার মুখে আগুন লাগিয়ে দেন। পরে মৃত ভেবে লাশ গুম করার জন্য কাঁধে করে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বনের জায়গায় একটি পানি যাওয়ার ড্রেনে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর নিজ বাড়িতে গিয়ে কোদাল নিয়ে এসে স্ত্রী হাসিনাকে মাটি চাপা দেন আব্দুর রউফ। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর এভাবেই নিজ স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা বর্ণনা দেন আব্দুর রউফ।
এর আগে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার নয়ানি খসালপুর দরগাপাড়া ফরেস্টের ২৭নং দাগের বাগানের পাশে গাছ লাগানোর গর্ত খুঁড়তে গিয়ে বন বিভাগের কর্মচারীরা সুমির মরদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশ গিয়ে একটি মহিলার মরদেহ উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বৃহস্পতিবার সকালে স্বামী আব্দুর রউফকে আটক করে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার চড়াই ভিটা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন তিনি। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আব্দুর রউফ আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
নিহত সুমি নবাবগঞ্জ উপজেলার খটখটিয়া কৃষ্ট চাঁদপুর গ্রামের মৃত মজিবর রহমানের মেয়ে। আটক আব্দুর রউফ বিরামপুর উপজেলার খাঁনপুর বন্ধন আদর্শ গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
বিরামপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাছিনা বেগমের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়। স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে বছর তিনেক আগে বিরামপুর উপজেলার খাঁনপুরে নানা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। আটক আব্দুর রউফ নিজ বাড়ি এবং শালবনের পাশের মাঠে পাম্প ঘর ভাড়া নিয়ে জমিতে সেচ দেওয়ার কাজ করতেন। দেড় বছর আগে খাঁনপুর বাজারে উভয়ের পরিচয় হয়। এর কিছুদিন পরে তারা বিয়েও করেন। সুমি রউফের ৪র্থ স্ত্রী। ১ম স্ত্রী মারা যায়, দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়ে তৃতীয় স্ত্রীর সাথে বন্ধন আদর্শগ্রামের থাকেন। পরে তার দেওয়া তথ্যেই রউফের বাড়ি থেকে তার ব্যবহৃত কোদাল ও মুখে আগুন দেওয়ার ছাই উদ্ধার করা হয়।
হাছিনা বেগমের সাথে বিয়ের পরে থেকে উপজেলার বিভিন্ন ভাড়া বাসায় থাকেন তারা। এমন কি মাঝে মাঝে রউফের কর্মস্থল শালবনের পাশে পাম্প ঘরেও রাত যাপন করেন। এরই মধ্যে হাছিনার গর্ভে সন্তান আসে। ঘটনার ১৩ দিন পূর্বে তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়।
বিরামপুর থানাপুলিশের উপ-পরিদর্শক (তদন্ত) মতিয়ার রহমান বলেন, প্রায় দশদিন আগে শনিবার স্ত্রী হাছিনা সন্তানকে অন্য কারো কাছে রেখে রউফের পাম্প ঘরে আসেন রাত ১০টায়। সন্তানসহ তাকে নিজ বাড়িতে উঠানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করেন রউফকে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা। পরে হাতাহাতির এক পর্যায়ে হাসিনার গলা টিপে দেন রউফ। পরে অজ্ঞান অবস্থায় পাম্প ঘরের পাশে মুখে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর কাঁধে করে মরদেহটি নিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে বনের জমিতে একটি পানি যাওয়া নালায় জীবন্ত অবস্থায় পুঁতে রাখেন।
জানতে চাইলে বিরামপুর থানার ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন, স্থানীয় লোকজন গত কয়েকদিন যাবত রউফের পাম্প ঘরে হাছিনা ও তার সন্তানকে কেউ দেখেনি পায়নি। এ ছাড়া মহিলাটির মরদেহ উদ্ধারের দিনে রউফের তৃতীয় স্ত্রীকে নিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে রেখে আসেন। এমনি একটি স্থানীয় সূত্র ধরে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেন। পরে রউফের বাড়িতে সেই রাতেই পুলিশ অভিযান চালায়। পরের দিন সকালে মুঠোফোন ট্র্যাক করে চড়াইভিটা এলাকা থেকে রউফকে আটক করা হয়।
ওসি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার অপরাধ স্বীকার করেছেন। কিন্তু স্ত্রী হাছিনার কোলের সন্তান কাকে দত্তক দিয়েছেন সে বিষয়ে রউফ কিছু জানাননি। পুলিশ বাচ্চাটির অনুসন্ধান অব্যাবহত রেখেছে।