সফল হতে মানুষ কত কী না করে, তার শেষ নেই। তবে বেশির ভাগ মানুষই সফলতার অর্থ জানে না। মহান আল্লাহ যাদের সফল বলে ঘোষণা দিয়েছেন তারাই প্রকৃত সফলকাম। তিনি পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সফলকাম মানুষদের বর্ণনা দিয়েছেন। নির্দেশনা দিয়েছেন সে সব বিষয়ে, যেগুলো একজন মানুষকে প্রকৃতপক্ষে সফল করতে পারে।
পবিত্র কোরআনে তাকওয়া, ঈমান বিল গায়েব, পবিত্র কোরআন ও পূববর্তী কিতাবসমূহকে বিশ্বাস, কিয়ামত ও আখিরাতে বিশ্বাস, সৎ কাজে আদেশ, অসৎ কাজে নিষেধ, নামাজ কায়েম, জাকাত প্রদান, আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়, রাসুল (সা.)-এর ওপর ঈমান আনা ও তাঁর সহযোগিতা করা, তাঁর সুন্নতের অনুসরণ করা, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিজের জান-মাল ব্যয় করে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর জন্য কাউকে ভালোবাসা বা ঘৃণা করা, সংকীর্ণ মনোভাব ত্যাগ করাকে সফলতা অর্জনের মাধ্যম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। নিম্নে সেসব আয়াত তুলে ধরা হলো, যেখানে মহান আল্লাহ এই গুণে গুণান্বিতদের সফল বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
ঈমান আনা
যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি নাজিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাজিল করা হয়েছে। আর আখিরাতের প্রতি তারা পূর্ণ বিশ্বাস রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম। (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩-৫)
রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ
যারা অনুসরণ করে রাসুলের, যে উম্মি নবী; যার গুণাবলি তারা নিজেদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জিলে লিখিত পায়, যে তাদের সৎ কাজের আদেশ দেয় ও বারণ করে অসৎ কাজ থেকে এবং তাদের জন্য পবিত্র বস্তু হালাল করে আর অপবিত্র বস্তু হারাম করে। আর তাদের থেকে বোঝা ও শৃঙ্খল, যা তাদের ওপর ছিল অপসারণ করে। সুতরাং যারা তার প্রতি ঈমান আনে, তাকে সম্মান করে, তাকে সাহায্য করে এবং তার সঙ্গে যে নূর নাজিল করা হয়েছে তা অনুসরণ করে তারাই সফলকাম। (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৫৭)
নামাজ কায়েম ও আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস
এগুলো প্রজ্ঞাপূর্ণ কিতাবের আয়াত, সৎকর্মশীলদের জন্য হিদায়াত ও রহমতস্বরূপ, যারা নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত দেয়, আর তারাই আখিরাতে দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করে; তারাই তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের ওপর এবং তারাই সফলকাম। (সুরা লুকমান, আয়াত : ২-৫)
আল্লাহর রাস্তায় আহ্বান করা
আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১০৪)
যারা সেই আহ্বানে সাড়া দেয় তারাও সফলকাম। ইরশাদ হয়েছে, মুমিনদের যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি এ মর্মে আহ্বান করা হয় যে তিনি তাদের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করবেন, তাদের কথা তো এই হয় যে তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম। আর তারাই সফলকাম। (সুরা নূর, আয়াত : ৫১)
বেশি পরিমাণে নেক আমল করা
কিয়ামতের দিন যাদের আমলের পাল্লা ভারী হবে, তাঁরাও সফলকাম। ইরশাদ হয়েছে, আর সেদিন পরিমাপ হবে যথাযথ। সুতরাং যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। (সুরা আরাফ, আয়াত : ৮)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর যাদের পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে সফলকাম। (মুমিমুন, আয়াত : ১০২)
শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করা
বিশ্বব্যাপী আল্লাহর দ্বিন ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জাহেলিয়াতের ঘোর অন্ধকার থেকে উম্মাহকে মুক্ত করার জন্য জান-মাল দিয়ে লড়াই করেছেন সাহাবায়ে কেরাম। যারা তাদের মতো বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে, আল্লাহ তাদের সফলকাম বলে ঘোষণা করেছেন। ইরশাদ হয়েছে; কিন্তু রাসুল ও তাঁর সঙ্গে মুমিনরা তাদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করে, আর সেসব লোকের জন্য আছে যাবতীয় কল্যাণ এবং তারাই সফলকাম। (সুরা তাওবা, আয়াত : ৮৮)
যথাযথভাবে মানুষের হক আদায় করা
প্রতিটি মানুষের ওপরই তার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও মিসকিন-মুসাফিরদের হক রয়েছে। যারা তা যথাযথভাবে পালন করবে। আল্লাহ তাদের সফল করবেন। ইরশাদ হয়েছে, অতএব আত্মীয়-স্বজনকে তাদের হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও। এটি উত্তম তাদের জন্য, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চায় এবং তারাই সফলকাম। (সুরা রুম, আয়াত : ৩৮)
অন্য মুমিনকে নিজের ওপর প্রাধান্য দেওয়া
আর মুহাজিরদের আগমনের আগে যারা মদিনাকে নিবাস হিসেবে গ্রহণ করেছিল এবং ঈমান এনেছিল (তাদের জন্যও এ সম্পদে অংশ রয়েছে), আর যারা তাদের কাছে হিজরত করে এসেছে তাদের ভালোবাসে। আর মুহাজিরদের যা প্রদান করা হয়েছে তার জন্য এরা তাদের অন্তরে কোনো ঈর্ষা অনুভব করে না এবং নিজেদের অভাব থাকা সত্ত্বেও নিজেদের ওপর তাদের অগ্রাধিকার দেয়। যাদের মনের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়েছে, তারাই সফলকাম। (সুরা হাশর, আয়াত : ৯)
অন্য আয়াতে এসেছে, অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, শ্রবণ করো, আনুগত্য করো এবং তোমাদের নিজেদের কল্যাণে ব্যয় করো, আর যাদের অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম। (সুরা তাগাবুন, হাদিস : ১৬)