মাসের পর মাস দীর্ঘ মতবিরোধ শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ার পর সংস্থাটির সাথে দেশটির সম্পর্ক ও বাণিজ্য নিয়ে চুক্তির বিষয়ে সম্মত হয়েছেন উভয়পক্ষের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার লন্ডন ও ব্রাসেলসে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইইউ প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ৩১ ডিসেম্বর ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক বিদায়ের মাত্র এক সপ্তাহ আগে উভয়পক্ষের চুক্তিতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা এলো। ইইউ থেকে ব্রিটেনের এই বিদায় সংক্ষেপে ব্রেক্সিট নামে পরিচিত।
লন্ডনের ডাউনিং স্ট্রিটে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বরিস জনসন বলেন, ‘আমরা আমাদের আইন ও আমাদের ভাগ্যকে আবার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছি।’
চুক্তির শর্তে একমত হওয়ার আগে উভয়পক্ষের মতবিরোধ খুব উগ্র হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য এটি উত্তম চুক্তি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, ব্রাসেলসের সংবাদ সম্মেলনে উরসুলা ভন ডার লিয়েন উভয়পক্ষের মাঝের চুক্তিকে নায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, ‘নতুন পাতা উল্টে ভবিষ্যতের দিকে নজর দেয়ার সময় হয়েছে।’ এসময় তিনি ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বিদায়েরও পরেও দেশটি বিশ্বাসযোগ্য অংশীদার হিসেবে থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
এদিকে চুক্তির শর্ত চূড়ান্ত করার আগে ব্রাসেলসে ইইউ’র কার্যালয়ে উভয়পক্ষের প্রতিনিধিরা রাতব্যাপী চুক্তির শর্ত সম্পর্কে পারস্পারিক আলোচনা করেন। এসময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ইইউ প্রধানের মধ্যে কয়েক দফায় ফোনালাপ হয়।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ বছরের জন্য যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যে মৎসশিল্পে অর্ন্তবর্তীকালীন অবস্থা বজায় থাকবে। এসময় যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত দেশগুলোর জেলেরা মাছ ধরতে পারবে।
এছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তন, জ্বালানি, নিরাপত্তা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষ একত্রে কাজ করবে।
এদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে আগামী ৩০ ডিসেম্বর চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করা হবে। পার্লামেন্টে সদস্যদের অনুমোদনের পর যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে এই চুক্তি কার্যকর হবে।
অপরদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে চুক্তির অনুমোদন আদায় করা অপেক্ষাকৃত জটিল। ২৭ সদস্য বিশিষ্ট সংস্থাটির সব রাষ্ট্রের নেতাদেরই এই চুক্তির পক্ষে অনুমোদন দেয়ার পরই সম্মিলিত ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এই চুক্তি আলোচনার জন্য পেশ করা হবে। বড়দিনের ছুটি ও করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে এই বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চার বছর আগে ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে যুক্তরাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের মাধ্যমে ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দেয় ব্রিটিশ জনগণ। এরপর থেকেই ইইউ থেকে বিদায় নেয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংস্থাটির সাথে আলোচনা শুরু করে যুক্তরাজ্য।
সূত্র: বিবিসি ও আলজাজিরা