চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা করোনার হটস্পটে পরিণত হওয়া ২৫ মে থেকে শুরু হওয়া বিশেষ লকডাউনের পঞ্চম দিনে আজ শনিবার আরো সাতজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয় বলে সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী জানান। সাতজনের মধ্যে দুজন ভারত থেকে আসা নাগরিক।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে যে সাতজনের শরীরে করোনার ভারতীয় ধরন শনাক্ত হয়েছে তার মধ্যে পাঁচজন পুরুষ ও দুজন নারী। পুরুষ পাঁচজনের মধ্যে সবচেয়ে কনিষ্ঠজনের বয়স ১৩ বছর। এছাড়া একজনের বয়স ৩০ বছর, আরেকজনের বয়স ২১ বছর। বাকি দুজনের একজনের বয়স ৫২ বছর এবং আরেকজনের বয়স ২৭ বছর। নারী দুজনের মধ্যে একজন ২৭ বছর বয়সী, আরেকজন ৩১ বছর বয়সী।
সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী শনিবার বিকেলে জানান, গত শুক্রবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ১১৩টি স্যাম্পল র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে ৩৮ জনের পজিটিভ পাওয়া গেছে। যা পরীক্ষার প্রায় ৩৪%। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বর্তমানে হাসপাতাল ও হোটেলসহ বাসায় কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন ১০৭ জন। এর মধ্যে ২৭ জন রয়েছেন সদর হাসপাতালে। এ পর্যন্ত মোট ১৫৬৭ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন গত শুক্রবার চারজনসহ ৩২ জন (শুক্রবার পর্যন্ত)।
সোনামসজিদ স্থলবন্দর পাশপোর্ট ইমিগ্রেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জাফর আলী জানান, শুক্রবার ও শনিবার ২ জন করোনা সংক্রমণসহ ১৯ মে থেকে ২৯ মে দুপুর পর্যন্ত ভারত থেকে প্রায় ৮২ জন পাসপোর্টধারী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। সবাইকে উপজেলা প্রশাসন হোটেলে কোয়ারেন্টিনের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তিনি আরো জানান ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকছেন।
লকডাউনে পুলিশ-পাবলিক লুকোচুরি খেলা
জেলা ও উপজেলা সদরের প্রবেশপথে পুলিশের টহল ও চেকিং পয়েন্ট থাকায় মানুষের যাতায়ত কম ও মাস্ক ব্যবহার দেখা গেলেও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাট-বাজারে মানুষের জটলা কমাতে ও মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে পুলিশ হিমশিম খাচ্ছে। টহল কোথাও কোথাও থাকলেও পুলিশ চলে যাবার পর পরই আবার আগের মতোই মানুষের চলাফেরা ও জটলা শুরু হচ্ছে।
যে কারণে বিশেষ লকডাউনেও ভারতীয় ভেরিয়েন্ট ছড়াল
১৯ মে থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৮২ জন পাসপোর্টধারী সোনামসজিদ পুলিশ ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারত থেকে আসা নাগরিকদের সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিনে না রাখতে পারা অন্যতম কারণ। এছাড়া ভারত থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রতিদিন প্রায় চার শতাধিক ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের চলাফেরার বিষয়টিকে ভারতীয় ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হবার অন্যতম কারণ বলে মনে করেন অনেকেই। জেলায় লকডাউন ঘোষণার দিনও জেলা প্রশাসকের বক্তব্যে এমন বিষয়টিও উঠে আসে।
২৪ মে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ গণমাধ্যমকর্মীদের জানিয়েছিলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাম্প্রতিক করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা প্রবেশের ফলে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশক্রমে এ জেলায় ৭ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ২৭ মে থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে যাতায়াতকারী ভারতীয় ট্রাকচালক ও সহকারীদের গলায় পরানো হচ্ছে লাল ফিতা।
বেশি আক্রান্ত
শিবগঞ্জ পৌরসভার জালমাছমারী ও বিনোদপুর ইউনিয়নের লছমানপুর গ্রামে কয়েকদিন আগে থেকেই ঘরে ঘরে অনেকেরই জ্বর হয়। শিবগঞ্জ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম রাব্বানীসহ তার পরিবারের কয়েকজন এবং শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ তার পরিবার করোনায় আক্রান্ত হন এক সপ্তাহ আগে।
বিধিনিষেধ না মানার প্রবনতা
জেলা পুলিশের ২৭টি চেকপোস্ট ও অর্ধশতাধিক তল্লাশি চৌকি বসানো, ৫টি উপজেলায় জেলা প্রশাসনের ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করলেও মানুষের বেপরোয়া ভাব কমেনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে ২৬ মে রাতে (লকডাউনের দ্বিতীয় দিন) একটি ট্রাকে করে ৪০ থেকে ৫০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাবার প্রাক্কালে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে ট্রাকটিকে আটক করে তাদের প্রত্যেককে ৪০০ টাকা করে জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়। জেলা প্রশাসনের ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত শনিবার লকডাউনের পঞ্চম দিন পর্যন্ত অনেককেই বিধি না মানা ও মাস্ক ব্যবহার না করার জন্য জরিবানা করে।