বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে বিএনপি’র রাজনীতিটা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়েই সীমাবদ্ধ, এর বাইরে তারা যেতে পারছে না। তারা বাংলাদেশের মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবে না, শুধু বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবে।’ তিনি বলেন, গত ১২ বছর ধরে আপনাদের রাজনীতিটা শুধুমাত্র বেগম জিয়ার মামলা, শাস্তি, তার হাঁটু এবং কোমরের ব্যাথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
আজ বুধবার দুপুরে রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডে বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি) মিলনায়তনে সাংবাদিকদের মাঝে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের করোনাকালীন সহায়তা চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সমসাময়িক প্রসঙ্গে তিনি একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে দেয়া ১০ কোটি টাকার চেকটি এ সময় ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর ওয়াজেদের হাতে তুলে দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নিজে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেক ভালো আছেন, স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন, তার কোনো অক্সিজেন সহায়তা লাগছে না, অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়া দ্রুত আরোগ্য লাভ করছেন। কিন্তু যেভাবে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা তৎপর হয়ে উঠেছেন এবং সরকার আইনগত ব্যাখ্যা দিয়ে যখন বললো যে তাকে বিদেশ পাঠানো সুযোগ নেই, তখন তারা যেভাবে সমালোচনা করছেন, হুশিয়ারিও দিয়েছেন, তা শুনে অনেকে মুচকি হেসেছে।’
‘মির্জা ফখরুল সাহেবকে বলবো, আপনাদের রাজনীতি দয়া করে শুধুমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যে সীমাবদ্ধ রাখবেন না, রাজনীতিটা জনগণের জন্য করুন’ উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘ক্রমাগতভাবে গত ১২ বছর ধরে আপনাদের রাজনীতিটা শুধুমাত্র বেগম জিয়ার মামলা, শাস্তি, তার হাঁটু এবং কোমরের ব্যাথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন, এই জন্য আপনারা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছেন।’
‘সাংবাদিকদের বেতনভাতা, চাকরি একটি শৃঙ্খলায় আনা দরকার, যাতে করে যে কেউ যেকোনো সময় চাকরিচ্যুত না হয়’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ পত্রিকার ডিক্লারেশন নিয়ে সাংবাদিকদের বেতনভাতা ঠিকভাবে দেন না, এটি হওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। আবার অনেকেই পত্রিকা বের করেন পাঁচশ কপি, ঘোষণা করেন পাঁচ হাজার বা পঞ্চাশ হাজার। এখানে শৃঙ্খলা আনা দরকার। আমি শুরু থেকেই চেষ্টা করছি, শৃঙ্খলা আনতে গিয়ে বহু বাধার সম্মুখিন আমি হয়েছি। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে কার প্রচার সংখ্যা কত সেটা আমরা নির্ধারণ করেছি। এই প্রচার সংখ্যাকে বাস্তবসম্মত করার জন্য আমি আপনাদের সহায়তা চাই।’
যে সমস্ত হাউজ থেকে সাংবাদিকদের ঠিকভাবে বেতনভাতা দেয়া হয় না, কিংবা চাকরিচ্যুত করা হয়, সেসব হাউজ সরকারের যে সমস্ত সুযোগ সুবিধা পায়, সেগুলো নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, বলেন তিনি।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা জাফর ওয়াজেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব খাজা মিয়া (অনলাইনে) এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আব্দুল মজিদ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু। অনুষ্ঠানে ২২১ জনের মাঝে চেক বিতরণ করেন অতিথিবৃন্দ।
বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিটিভি অ্যাপ উদ্বোধন করেন।
অ্যাপটি উদ্বোধনকালে বলেন, অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে মোবাইলে বাংলাদেশ টেলিভিশন দেখার এই সুবিধা দেশের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য নতুন যুগের সূচনা এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের আরেকটি গণমুখী দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশ টেলিভিশন-বিটিভি’র মহাপরিচালক সোহরাব হোসেন, সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক আবেদা আখতার, বিটিভি’র উপমহাপরিচালক (অনুষ্ঠান) ড. সৈয়দা তাসমিনা আহমেদসহ মন্ত্রণালয় ও বিটিভি’র কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
টেলিভিশনগুলোর সম্প্রচারের ফলে গণমাধ্যম জগতে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, বিশাল কর্মক্ষেত্রও তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়ে কয়েক লাখ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। দেশের অর্থনীতিতেও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন মেধা, মূল্যবোধ, মমত্ব, দেশাত্মবোধের সমন্বয়ে প্রত্যয়ী হয়ে গড়ে উঠতে পারে, সেই লক্ষ্য নিয়েই যেন সকল অনুষ্ঠান তৈরি হয়, সকল টেলিভিশনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।