চুক্তিতে সই করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বেক্সিমকো ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এবং সেরামের অতিরিক্ত পরিচালক (রপ্তানি)। চুক্তির বিষয়ে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ৮৮ লাখ ৪২ হাজার ৮৮৮ ডোজ টিকা প্রয়োগ করে ফেলেছে। প্রথম ডোজ পাওয়া ১৩ লাখের বেশি মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার নিশ্চয়তা এখনো হয়নি। এ নিয়ে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ আছে। তবে টিকার ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী এই পরিস্থিতির জন্য কাউকে দায়ী করার সুযোগ নেই।
কেননা চুক্তিতে বলা আছে, কোনো পক্ষ যদি পরোক্ষ বা বিশেষভাবে কিংবা বিশেষ কোনো পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা হলে সে ক্ষেত্রে কেউ দায়ী থাকবে না। পক্ষগুলোর মধ্যে আছে সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।
তিন পক্ষের মধ্যে টিকা কেনার এই চুক্তি হয়েছিল গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর। ২৭ পৃষ্ঠার চুক্তিতে টিকার দাম, সরবরাহব্যবস্থা, দায়দায়িত্ব, সেবা ফি, অপ্রতিরোধ্য কারণ (ফোর্স মেজর) বিষয়ে বলা আছে। তাতে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা এই টিকার পরিবেশকের দায়িত্ব পালন করবে।
চুক্তির আওতায় এ পর্যন্ত ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৭১৯ জন প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ১৫ মের পর আর দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো টিকা থাকবে না। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির কর্মকর্তারা এ নিয়ে জানিয়েছেন, প্রথম ডোজ পাওয়া প্রত্যেককে দ্বিতীয় ডোজ টিকা তাঁরা দিতে পারবেন, এমন সম্ভাবনা কম।
প্রথম ডোজ টিকা পাওয়া অনেকেই গণমাধ্যমে ফোন করে জানতে চাইছেন, তাঁরা আদৌ দ্বিতীয় ডোজ পাবেন কি না, দ্বিতীয় ডোজ না পেলে ক্ষতি কী হবে, চীনের বা রাশিয়ার টিকা ভারতের টিকার দ্বিতীয় ডোজের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কি না। অনেকে আশা করেছিলেন, দুই ডোজ টিকা নিয়ে তাঁরা করোনা সংক্রমণ থেকে দূরে থাকবেন।
ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে সরকারের পক্ষে সই করেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, বেক্সিমকো ফার্মার পক্ষে প্রতিষ্ঠানের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এস এম রাব্বুর রেজা এবং সেরাম ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক (রপ্তানি) সন্দীপ মুলে।
তবে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ওই চুক্তিতে কী আছে, আমি জানি না। আমি কোনো দিন ওই চুক্তি দেখিনি।’
টিকা পাওয়ার সময়সীমা
চুক্তিতে আছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এই টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদন দেওয়ার এক মাসের মধ্যেই টিকা রপ্তানি শুরু করবে সেরাম ইনস্টিটিউট। টিকা রপ্তানি শুরু করার পর থেকে ছয় মাসের মধ্যে মোট ৩ কোটি টিকা তারা বাংলাদেশে পাঠাবে। প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কত টিকা দেবে, তা তিন পক্ষ আলোচনা করে ঠিক করবে। তবে ছয় মাসেই চুক্তির ৩ কোটি টিকা বাংলাদেশে পাঠাবে, তা স্পষ্ট বলা আছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সেরামের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় জানুয়ারি মাসে। এরপর টিকার প্রথম চালান আসে ২৫ জানুয়ারি। প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা এসেছিল। তখন বেক্সিমকো ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এরপর প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা আসবে। ফেব্রুয়ারি মাসে সেরাম ২০ লাখ টিকা পাঠিয়েছিল। মার্চ ও এপ্রিল মাসে কোনো টিকা পাঠায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, এই মুহূর্তে সরকার চুক্তির খুঁটিনাটি বিষয়ের চেয়ে বাকি টিকা পাওয়ার বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে। এ জন্য গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ত্রিপক্ষীয় চুক্তির চালান থেকে ৩০ লাখ টিকা সরবরাহের জন্য ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি পাঠিয়েছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা কেনার যে প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে সেরামের চুক্তির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।