ধান চুরির অভিযোগে নেত্রকোণার মদনে আব্দুল বারেক (৫৫) নামের এক বয়স্ক ভিক্ষুককে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করার পর সেই ভিক্ষুকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হয়েছে। নির্যাতনকারী আটক মাসুদের ভাই খাইরুল বাদী হয়ে আজ বৃহস্পতিবার থানায় এ মামলা করেন।
এদিকে, ভিক্ষুক পেটানোর একটি ভিডিও এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অমানুসিক নির্যাতনের পর ওই ভিক্ষুককে পুলিশে হস্তান্তর করে নির্যাতন কারীরা। গতকাল বুধবার উপজেলার গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের বারগরি পূর্বহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মাসুদ নামের এক যুবককে ওই রাতেই আটক করেছে মদন থানার পুলিশ। মাসুদ পূর্বহাটি গ্রামের মৃত মুক্তার আলীর ছেলে।
জানা গেছে, আব্দুল বারেক নামের ওই ভিক্ষুক ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার বনহাটি গ্রামের মৃত আব্দুল গফুরের ছেলে। তিনি হাওরাঞ্চলে ধান কাটার সময় ভিক্ষা করতে এসেছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর ধরে ওই ভিক্ষুক বৈশাখ এলে হাওরাঞ্চলে এসে ধান ভিক্ষা করেন। এ বছর গোবিন্দশ্রী গ্রামের আব্দুল খালেক এর ছেলে ঝুমন এর পরিত্যাক্ত ঘরে বসবাস করে ভিক্ষা করছিলেন। গতকাল বুধবার সকালে মুক্তার আলীর ছেলে খাইরুল ধান চুরির অভিযোগে ভিক্ষুককে বেঁধে রাখে। পরে তার ছোট ভাই মাসুদসহ কয়েকজন ঘণ্টাব্যাপী ওই ভিক্ষুককে মারধর করে। নির্যাতনের পর মদন থানার পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই বস্তা ধানসহ ওই ভিক্ষুকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
পরে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে নির্যাতনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে রাত আনুমানিক ২টার দিকে মাসুদকে তার নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
আব্দুল বারেকের ছেলে আজিজুল মিয়া (২৪) বৃহস্পতিবার দুপুরে বলেন, ‘আমরা গরীব মানুষ। আমি ঢাকা গার্মেন্টে কাম করি। আমার আব্বা চার পাঁচ দিন আগে মদনের গোবিন্দশ্রী একটি বাড়িতে থাকইক্কা ধান সাহায্য তুলে। অহন আমার আব্বারে তারা চুরির অপবাদ দিয়া বাইন্দা নির্যাতন করছে। আবার আমার আব্বার নামে উল্টা মামলা করছে। আমরা মামলা করবাম কিবাং, টেহা পয়সা নাই। পুলিশ মামলা নিত চাইতাছে না।’
এ ব্যাপারে খাইরুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে আমার বসত ঘর থেকে আব্দুল বারেক ধান চুরি করে। বারেককে মারধর করে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ এসে দুই বস্তা ধানসহ বারেক কে থানায় নিয়ে যায়। পরে পুলিশ তাকে মদন হাসপাতে চিকিৎসা করে থানায় নিয়ে যায়।
মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আলম জানান, আব্দুল বারেককে মারধরের ঘটনায় মাসুদ মিয়াকে আটক করা হয়েছে। বারেক এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তাকে হাসপাতাল থেকে থানায় এনে রাখা হয়েছে। বারেকের বিরুদ্ধে মাসুদের ভাই থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেছেন।
পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুন্সী বলেন, আব্দুল বারেককে নির্যাতনের ভিডিওটি পুলিশের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। বারেকের বিরুদ্ধে চুরির মামলা হলেও তিনি চাইলে তাকে যারা নির্যাতন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।