পটুয়াখালীর দুমকিতে ডায়েরীয়ার প্রকোপ আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলায় ডায়েরিয়া আক্রান্তে এক শিশুসহ অন্তত: চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩১ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে বেড সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে রোগীদের মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা গ্রহন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এ পর্যন্ত অন্তত: দু’শতাধিক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রুগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই আসছে ডায়েরিয়াক্রান্ত রুগী। এদের সামাল দিতে কর্তৃপক্ষেরও দম ফেলার ফুরছুত নেই। অপর দিকে হাসপাতালে ও বাইরে কলেরা স্যালাইনের মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। জরুরী প্রয়োজনেও স্যালাইনসহ পাওয়া যাচ্ছে না এমন অভিযোগ রোগীর স্বজনদের। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ শহীদুল হাসান শাহীন স্যালাইন সংকটের সত্যতা স্বীকার করে জানান, ইনডেন দেয়া হয়েছে। দু’একদিনে সংকট কেটে যাবে।
রবিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে উপেজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়েরিয়া আক্রান্তে ভর্তি হওয়া জলিশা গ্রামের আ: হক মুন্সী (৭০) মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার ১১মাস বয়সী আকিব খান নামের এক শিশুর ডায়েরিয়ায় মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া হাসপাতালের বাইরে পাংগাশিয়া ইউনিয়নে অন্তত: ২জনের ডায়েরিয়া আক্রান্তে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত এক সপ্তাহে উপজেলায় অন্তত: ৪জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিৎ হওয়া গেছে। বিগত এক সপ্তাহে অন্তত: দু’শতাধিক ডায়েরীয়া আক্রান্ত রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ্য হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন। প্রতিদিনই গড়ে ২৫-৩০ জন ডায়েরীয়া আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য সেবিকাদের এসব রোগীদের সামাল দিতে রীতিমতো হিমশীম খেতে হচ্ছে এমন দাবী আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাকিরুজ্জামান’র। হাসপাতালে ভর্তিকৃত অন্যান্য রুগীদের পাশাপাশি ডায়েরীয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বেড সংকট দেখা দিয়েছে। বেড না থাকায় হাসপাতালের মেঝেতে রোগীরা বিছানা পেতে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ এন্টিবায়োটিক ও কলেরা স্যালাইন সরবরাহ না থাকায় হাসপাতাল থেকে রোগীদের এন্টিবায়োটিক ও কলেরা স্যালাইন দেয়া হচ্ছে না। অপর দিকে বাজারেও গত দু’দিন ধরে কলেরা স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। উপজেলা শহরের পীরতলা বাজার, হাসপাতাল সড়ক, দুমকি নতুন বাজার, লেবুখালীর পাগলা সহ প্রত্যন্ত এলাকার ঔষধের দোকানে কলেরা স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না। থানা ব্রিজের মা ফার্মেসীর মালিক সোহাগ হওলাদার, পীরতলা বাজারের জনতা ফার্মেসীর মালিক আবুল বাশার খান স্যালাইন সংকটের প্রশ্নের জবাবে বলেন, কোম্পানীর সাপ্লাই শর্ট করে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রত্যেকেই অর্ডার করা আছে কিন্ত মাল (সালাইন) পাচ্ছি না।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়নেই ডায়রিয়ায় আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। আংগারিয়া, মুরাদিয়া ও শ্রীরামপুর ইউনিয়নের রোগীরা কাছাকাছি হওয়ায় এ হাসপতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। দুরত্বের কারনে লেবুখালী ও পাংগাশিয়ার বেশীর ভাগ মানুষই স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিক ও পটুয়াখালী সদর হাসপাতাল মুখী। বর্তমানে পাংগাশিয়া ইউনিয়নে ডায়েরিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক আবদুর রহমান জানান, পাংগাশিয়ায় প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী আছে। গত ৪/৫দিন যাবৎ ঘুম নিদ্রা বন্ধ করে রোগীদের বাড়ি বাড়ি দৌড়ে চিকিৎসা দিতে দিতে তিনি এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। একই বক্তব্য উপজেলা শহরের আরও কয়েকজন পল্লী চিকিৎসকের।
এ বিষয়ে জানতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মীর শহীদুল হাসান শাহীন বলেন, গত কয়েকদিন যাবৎ ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগীর বেড সমস্যা, চিকিৎসা প্রদানসহ নানা বিষয় নিয়ে দিশেহারা অবস্থা। স্যালাইন সংকটের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ সংকটের মধ্যে থেকেই আমরা ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা প্রদান করে যাচ্ছি। তিনি ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে দ্রæত রোগীদের উপজেলা হাসপাতালে পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। অন্যান্য ইউনিয়নে ডায়েরিয়ার প্রাদুর্ভাব প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মী, পরিদর্শকরা সার্বক্ষনিক বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। পরিস্থিতি বেশী খারাপ হলে তারা রিপোর্ট করবেন। আমরা উর্ধ্বতণ কর্তপক্ষের নির্দেশনা ক্রমে পরবর্তি ব্যবস্থ গ্রহন করা হবে।