আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“ তােমরা পানাহার অব্যাহত রাখতে পার যতক্ষন পর্যন্ত রাতের অন্ধকার রেখার ভিতর থেকে ভােরের আলােক রেখা তােমাদের জন্য পরিষ্কার প্রতিভাত না হয় । অতঃপর তােমরা রাতের আগমন পর্যন্ত রােযা পূর্ণ করে নাও । ” ( বাকারাঃ ১৮৭ ) এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন , কখন রােজা শুরু করতে হবে আর কখন ইফতার করতে হবে । আমরা সাধারণত যখন ইফতাৱ করি এই সময়টা কুরআনে বর্ণিত সময় কিনা এটা আমাদের ভাবতে হবে ।
আল্লাহ কুরআনে ইফতার করার বিষয়ে লাইল ‘ শব্দ ব্যবহার করেছেন । আরবী ‘ লাইল ‘ শব্দের অর্থ ‘রাত্রি ‘। আমরা সাধারণত যখন ইফতার করি তখন হয় সন্ধ্যা । সন্ধ্যা আরবীতে হলাে ‘ আছিল ‘ ।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
“ আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে , তারা সবাই ইচ্ছায় হােক আর অনিচ্ছায় হােক আল্লাহকে সেজদা করে চলেছে , এমনকি সকাল সন্ধ্যায় তাদের ছায়াগুলিও । ” ( রাদঃ ১৫ ) এই আয়াতে আল্লাহ সন্ধ্যাকে আছিল বলেছেন । এছাড়াও কুরআনে আল – লাইল নামে একটি ছুরা রয়েছে । এ ছুরার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন রাতের শপথ যখন তা ঢেকে যায় । এভাবে আল্লাহ কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় লাইল শব্দ দ্বারা রাত বুঝিয়েছেন । সূর্য অস্ত যাওয়ার পর প্রায় ৩০ মিনিট আকাশে আমরা যে রক্তিম আভা দেখতে পাই সেটাকে কুরআনে বলা হয়েছে সাক । এই সাফাকের পরেই শুরু হয় রাত ।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
” শপথ সন্ধ্যাকালীন রক্তিম আভার । ” ( ইনশিকাকঃ ১৬ ) আর পরের আয়াতেই আল্লাহ বলেন “ এবং শপথ রাতের ” । এখানেও আল্লাহ রাত বুঝাতে ‘ লাইল ‘ শব্দটি ব্যবহার করেছেন । চিন্তার বিষয় আল্লাহ যেখানে রাতের অর্থাৎ ‘ লাইল ‘ এর আগমন পর্যন্ত রোজাকে পূর্ণ করতে বলেছেন , সেখানে রাতের আগমন আসার আগেই কিভাবে সমাজে ইফতার করা চালু হলাে । আমাদের চিন্তা করতে হবে আমরা কি সঠিক সময়ে ইফতার করছি তাে ? নাকি ২৫-৩০ মিনিটের জন্য আমাদের রোজা নষ্ট করছি । এ বিষয়টি বােঝার জন্য আমরা কুরআন খুলে দেখতে পারি ।
রাসূল ( সাঃ ) বলেছেনঃ
“ যখন দেখবে রাতের অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে তখন রােজাদার ইফতারী করবে । ” ( বােখারী শরীফঃ ১৮১৬ নং হাদিস ) হাদিসে উল্লেখ আছেঃ “ ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত ওমর বিন খাত্তাব ও উসমান বিন আফফান ( রাঃ ) উভয়ই মাগরিবের ছলাত আদায় করতেন এমন সময় রাতের অন্ধকার নেমে আসতাে । অতঃপর তারা ইফতার করতেন । এ শিক্ষা তারা মুহাম্মদ ( সাঃ ) থেকে পেয়েছেন । ” ( মুয়াত্তায় মালেক ; প্রথম খন্ড ২৩৯ পৃষ্টা ; ৬৯৪ নং হাদিস ) ।
অন্য আরেকটি হাদিসে উল্লেখ আছেঃ
“ হযরত সাহল ইবনে সাদ ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত যতদিন লােকজন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন পর্যন্ত তারা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে না । ” ( বোখারী শরীফ : ১৮১৮ নং হাদিস ) এই হাদিসে তাড়াতাড়ি ইফতার করার অর্থ এই নয় যে ইফতারের সময় হওয়ার আগেই ইফতার করে ফেলতে হবে । এই হাদিস বলার মূল কারন হলাে এই যে , ইহুদী জাতী ইফতার করে রাতের মধ্যাংশে আর খ্রিষ্টান জাত্রী ইফতার করে ইশার ছলাতের দীর্ঘসময় পরে । আল্লাহ যেহেতু বলেছেন রাত্রি হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করতে হবে তাই রাত্রি আসার সাথে সাথেই ইফতার করতে হবে । এই অবস্থায় আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আমরা কুরআন ও হাদিসের কথা মানবো নাকি সমাজের প্রচলিত সময়ে ইফতার করবে ।
আল্লাহ বলেন ,
“ শুধু গােড়ামীর বশবর্তী হয়েই তারা আল্লাহর নাযিল করা বিধান অস্বীকার করেছে । ” ( বাকারাঃ ৯০ ) আল্লাহ আমাদের সকল গোড়ামী থেকে হেফাজত করুন ।