টানা ৭ ঘণ্টা অবরোধের পর ৩ শর্তে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। একুশে ফেব্রুয়ারির জন্য আগামীকাল রবিবার কোনো কর্মসূচি রাখেনি তারা। তবে ৩ শর্ত পূরণ না হলে আবারও মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সব দাবি পূরণ হয়েছে বলে দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের মামলায় ইতোমধ্যে দুই জন আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। এই মামলার অভিযোগ তদন্ত চলছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের নির্যাতনকারীদের গ্রেফতার, চিহ্নিত অভিযুক্তদের মামলায় আসামি করা এবং শিক্ষার্থীদের পূর্ণ নিরাপত্তা প্রদানের আল্টিমেটাম শেষ হয়ে যাওয়ায় শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় এই মহাসড়কে জরুরি ব্যতিত সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারা মহাসড়কে গাছের গুড়ি ফেলে ব্যারিগেট সৃষ্টি করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
বিকেল পৌঁনে ৩টার দিকে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন, মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোকতার হোসেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার দাসসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষাথীদের প্রতিনিধিদের সাথে রুদ্ধদ্বার আলোচনায় বসেন। বিকেল ৫টা পর্যন্ত দীর্ঘ আলোচনায় শিক্ষার্থীরা তাদের পূর্বের দেয়া ৩ শর্তে অটল থাকেন। এই দাবি আদায় না হলে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার কথা বলেন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি আইন বিভাগের ছাত্র অমিত হাসান রক্তিম।
সভা শেষে শিক্ষার্থী আলিম সালেহী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তারা অভিযুক্ত হামলাকারীদের নামের তালিকা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার মামলায় দু’জন শ্রমিক গ্রেফতার করা হলেও প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করার অবিযোগ করেন তারা। ওই হামলাকারীদের গ্রেফতার, মামলায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা এবং শিক্ষার্থীদের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। আজকের মতো বিকেল সাড়ে ৫টায় তারা মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি স্থগিত করেছেন। একুশে ফেব্রুয়ারির কারণে আগামীকাল রবিবার কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি।
শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনার বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, শিক্ষার্থীরা ৩টি দাবি তুলেছিল। তাদের ৩ দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। তাদের উপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলার দুই আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে পুলিশ প্রশাসনও নিশ্চয়তা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানানোয় তারা বিকেলে অবরোধ তুলে নিয়েছে।
সভা শেষে মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. মোকতার হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের উপর হামলার অভিযোগে কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ওই মামলার তদন্ত চলছে। পুলিশের তদন্তে অভিযুক্ত হওয়ায় দুই শ্রমিককে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যান্য আসামিদের সনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
গত মঙ্গলবার সকাল ১১টায় নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বিআরটিসি শ্রমিকদের হাতে লাঞ্ছিত হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওইদিন দুপুর ১টায় নগরীর রূপাতলী বাস টার্মিনালে অবরোধ এবং বিক্ষোভ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবির মুখে বিআরটিসি’র অভিযুক্ত কর্মচারী মো. রফিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে গ্রেফতারের পরপরই বিকেল ৪টায় অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে নগরীর রূপাতলী হাউজিংয়ের বিভিন্ন মেসে ঢুকে অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থীকে নির্যাতন করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন মেসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ তাদের।