সামরিক শাসনের সময় জারি করা অধ্যাদেশগুলোর মধ্যে এখনো যেগুলো আইনে পরিণত হয়নি সেগুলো আইনে পরিণত করার কাজে দেরি হওয়ায় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৫৯টি অধ্যাদেশ এখনো আইনে পরিণত হয়নি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অধ্যাদেশ অর্থাৎ ৯টি অধ্যাদেশ ঝুলে আছে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে (এনবিআর)। আইন মন্ত্রণালয়ে সাতটি। জননিরাপত্তা বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে ছয়টি করে অধ্যাদেশ।
গত সোমবার মন্ত্রিসভায় ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২০ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রতিবেদন উপস্থাপন’ করা হয়। তখন ওই সব অধ্যাদেশ আইনে রূপান্তর করার কাজের ধীরগতি দেখে প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেন।
একটি আইন পাস করতে হলে বিভিন্ন পর্যায়ে আট থেকে ১০টি ধাপ পার হতে হয়। তবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে অনেক সময় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার হয়। তখন সংসদ অধিবেশন না চললে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর সরাসরি রাষ্ট্রপতির সম্মতি নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পরে সংসদ অধিবেশন বসলে ৩০ দিনের মধ্যে সেই অধ্যাদেশ সংসদে বিল আকারে তুলে আইনে পরিণত করতে হয়। সামরিক সরকারের আমলে সংসদ না থাকায় সবই অধ্যাদেশ আকারে পাস হয়েছে। পরবর্তী সময়ে গণতান্ত্রিক সরকার এলেও সেসব অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করা হয়নি।
তবে সামরিক সরকারগুলো গণতান্ত্রিক লেবাস ধারণ করার সময় তাদের প্রণীত অধ্যাদেশগুলোর বেশ কয়েকটির বৈধতা নিয়ে নেয় সংসদে।
সোমবার মন্ত্রিসভায় অধ্যাদেশসংক্রান্ত আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী বিরক্তি প্রকাশ করেছেন বলে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থিত একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সামরিক সরকারের আমলের অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করতে দেরি করছে তাদের প্রতিই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী জুনের মধ্যে বাকি থাকা অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিণত করতে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন।
বৈঠকে উপস্থিত একটি সূত্র কালের কণ্ঠকে জানায়, মন্ত্রিসভায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাখোশ হওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায় শিগগিরই কাজটি হয়ে যাবে।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সংশ্লিষ্ট একাধিক মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাকি থাকা অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিণত করতে এ সপ্তাহের মধ্যেই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
লেজিসলেটিভ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সামরিক সরকারের আমলে জারি করা অধ্যাদেশের সংখ্যা ছিল দুই শতাধিক। উচ্চ আদালতে সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর মামলায় সামরিক সরকারের আমলের সব কাজ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এতে করে সামরিক আমলে জারি করা সব অধ্যাদেশও বাতিল হয়ে যায়। তবে জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈধ করার উদ্যোগ নেয় সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় সে কাজ চলছে দীর্ঘদিন। তবে ঠিক কত দিনের মধ্যে আইনে পরিবর্তন করতে হবে তার কোনো সময়সীমা দেওয়া ছিল না। এখন সময় নির্ধারিত হওয়ায় দ্রুতই সম্পন্ন হবে আশা করা যায়।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গত মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপিত তথ্য অনুযায়ী, অধ্যাদেশ থেকে আইনে পরিণত করতে বাকি থাকার মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঁচটি, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে চারটি রয়েছে। দুটি করে অধ্যাদেশ রয়েছে নৌপরিবহন, ধর্ম, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, শিল্প, স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে। একটি করে অধ্যাদেশ বাকি আছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ এবং ১৯৮২ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সামরিক শাসনের ক্ষমতাবলে জারিকৃত অধ্যাদেশগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ আইনে পরিণত করার নির্দেশ ছিল।
গত সোমবারের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রতিটি মন্ত্রণালয় অনুযায়ী তালিকা করে মন্ত্রিপরিষদ থেকে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে আগামী জুন মাসের মধ্যে অবশ্যই অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিণত করতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট সব সচিবকে নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সেখানে বিদ্যমান অধ্যাদেশগুলো আইনে পরিণত করতে কোনো জটিলতা আছে কি না সেসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।