২০৩০ সালের মধ্যে ব্রিটেনে রাসায়নিক, জীবাণু বা পরমাণু অস্ত্রের হামলা হতে পারে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা কিংবা উগ্র ডানপন্থি, বামপন্থি বা উত্তর আয়ারল্যান্ডের সন্ত্রাসীরা এ ধরনের হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রনীতি পর্যালোচনা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিবেদনে এসব দাবি করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের ‘বড় হুমকি’র মুখে রয়েছে ব্রিটেন। নতুন নতুন সমর প্রযুক্তির কারণে এই ঝুঁকি ক্রমেই বাড়বে। এই ‘হুমকি’ মোকাবিলায় এখনই পরিকল্পনা শুরু করেছে দেশটির সরকার।
পরিকল্পনার অংশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের প্রধান কার্যালয় হোয়াইট হাউজের অনুকরণে একটি ‘সিচুয়েশন রুম’ তথা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। এখান থেকেই নিজেদের দেশ ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে বিভিন্ন সংকট ও দ্রুত পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।
রয়টার্স জানায়, ব্রিটেনের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, উন্নয়ন ও পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কিত ‘ইনটাগ্রেটেড রিভিউ অব সিকিউরিটি, ডিফেন্স, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ফরেন পলিসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে দেশটির ব্রেক্সিট (ইউরোপ থেকে বিচ্ছেদ) পরবর্তী ব্রিটেনের পররাষ্ট্রনীতিসহ বিভিন্ন নীতি কেমন তা বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। বরিস জনসনের সরকারের এই প্রতিবেদন মতে, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ব্রিটেনের জনগণ ও এর বিভিন্ন স্বার্থের ওপর হামলা হতে পারে।
বিশেষ করে ‘ইসলামি সন্ত্রাসবাদ’ এই হামলা চালাতে পারে। হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে চরম ডান অথবা বাম ও উত্তর আয়ারল্যান্ডের সন্ত্রাসীদের থেকেও।
এ ধরনের হামলা মোকাবিলায় দেশের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় আরও বাড়ানো হবে। আগামী চার বছরে এই ব্যয় দুই হাজার ৪০০ কোটি পাউন্ডে দাঁড়াতে পারে। পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৮০ থেকে ২৬০টিতে বৃদ্ধি করা হবে। পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধি করা হবে অন্তত ৪৫ শতাংশ।
একই সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীতে রাসায়নিক, জীবাণু ও ডিজিটাল হামলা মোকাবিলায় দক্ষ লোকবল যুক্ত করা হবে।
হেনরি জ্যাকসন সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক ড. এ্যালান মেনদোজা বলেন, এ ধরনের হামলা বা নতুন ধরনের যুদ্ধের মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। কারণ ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবন রক্ষায় বিষয়টি সতিক্যারের হুমকি।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও তা সন্ত্রাসীদের হাতে চলে যাওয়া ও ব্রিটেনে হামলার আশঙ্কায় এ ধরনের সার্বিক পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে পারমাণবিক শক্তিধর অনেক দেশ আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মানছে না বলে ব্রিটেন ও ন্যাটোকে এ ধরনের হামলায় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলেও মনে করছেন ব্রিটিশ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
মঙ্গলবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ওই পর্যালোচনা প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী বরিস। এ সময় তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধ ও টেকসই ডিজিটাল ব্রিটেন’ গড়তে এবং যে কোনো শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড শনাক্ত ও প্রতিরোধে জাতীয় সাইবার বাহিনী ব্যবহার করবে ব্রিটেন।
বক্তব্যে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ-জীবাণু ও ভাইরাসকে বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হিসাবে চিহ্নিত করেন বরিস। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই আরেকটি মহামারি দেখা দিতে পারে। এবং সেটা সম্ভবত চলতি দশকের মধ্যেই।
এমনটাই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। ২০৩০ সালের আগেই করোনাভাইরাস মহামারির মতোই আরেকটি মহামারির ‘বাস্তব সম্ভাবনা’ দেখা যাচ্ছে।