দাপ্তরিক জটিলতায় গত ১২ দিন ধরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে কাদির শেখ (৭০) নামে এক ভারতীয় নাগরিকের লাশ পড়ে আছে। লাশ ফেরত পেতে পরিবার ভারতের একটি মানবাধিকার সংস্থাসহ সেদেশের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শরণাপন্ন হয়েছেন। কিন্তু ১২দিন পরও লাশ ফেরত না পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় আছে পরিবারটি।
এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মালদা জজ আদালতের মানবাধিকার আইনজীবী মৃত্যুঞ্জয় দাস শুক্রবার বিকালে ফোনে বলেন, কাদির শেখের লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে আছে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র না পাওয়ায়। এতে ভুক্তভোগী পরিবারের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
নিহত কাদির শেখ পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার কালিয়াচক থানার চকমাইলপুর সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দা। এলাকাটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী জমিনপুর গ্রামের বিপরীতে সীমান্তের কাঁটাতারের ওপারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ র্যাবের একটি দল কাদির শেখ ও তার স্ত্রী আলেকনুর বিবিকে চারটি পিস্তল ও ২৭টি গুলিসহ জমিনপুর সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছিল তারা অস্ত্র ব্যবসায়ী। তখন থেকেই ভারতীয় এই দম্পতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন। এক বছর পর কাদির শেখের স্ত্রী আলেকনুর বিবি জামিনে মুক্ত হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কালিয়াচক থানার চকমাইল গ্রামে নিজের বাড়িতে ফিরে যান। তবে মামলাটি আদালতে চলমান থাকায় কাদির শেখের জামিন হয়নি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার ইসমাইল হোসেন জানান, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মামলাটির অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় কাদির শেখ ও তার স্ত্রী আলেকনুর বিবিকে বেকসুর খালাস প্রদানের রায় দেন। তবে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে চিঠি চালাচালির পরও প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় কাদির শেখ চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগারেই বন্দি ছিলেন।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, চলতি মাসের প্রথম দিকে কাদির শেখ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে তার শারিরীক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাকে রামেক হাসপাতালের প্রিজন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়েছিল। গত ১৪ ডিসেম্বর রাতে ভারতীয় নাগরিক কাদির শেখ সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন। পরদিনই কারা অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয় তার লাশ ভারতে পাঠানোর জন্য। তবে এখন পর্যন্ত অনুমতি না আসায় কাদির শেখের লাশ মেডিকেল কলেজ মর্গেই রয়েছে। ইতোমধ্যে তার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি ভারতীয় হাইকমিশনকেও জানানো হয়েছে।
এদিকে আইনজীবী ও মানবাধিককর্মী মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন, ভারতের স্বরাষ্ট্র ও বিদেশ মন্ত্রণালয় ছাড়াও ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানিয়ে দ্রুত লাশটি দেশে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো লাশ ফেরতের অনুমতি না দেওয়ায় রামেক হাসপাতালেন মর্গে পড়ে আছে।
কাদির শেখের স্ত্রী আলেকনুর বিবি মোবাইল ফোনে ঢাকাটাইমসকে জানান, আদালত থেকে বেকসুর খালাস পেলেও তার স্বামী আইনী জটিলতায় দেশে ফিরতে পারেননি। এখন লাশটি অন্তত তিনি ফেরত চান। নিজের জন্ম ভিটাতেই যেন তাকে শায়িত করা যায়, সেজন্য দ্রুত আলেকনুর বিবি বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।