এম হাসান মুসা শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) থেকে: পাইলট নিথর হওয়ার ২৫ মিনিট পর সেদিন ককপিটে বিমানের হাল ধরেছিলেন ঝিনাইদহের কৃতি সন্তান পাইলট মোস্তাাকিম। নিরাপদে অবতরন করিয়েছিলেন বিমানের মোট ১২৪ জন যাত্রীকেই। এক দিকে ক্যাপ্টেন নওশাদের নিথর দেহ, অন্য দিকে ১২৪ জন যাত্রী। ঘাবড়ে না গিয়ে তখনই ককপিটের কন্ট্রোল নেন সঙ্গে থাকা ফার্স্ট অফিসার ঝিনাইদহের মোস্তাকিম পিয়াস।ভারতের রায়পুরের আকাশে থাকাকালে হুট করেই নিথর হয়ে পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। বাংলাদেশ বিমানের ফার্স্ট অফিসার পাইলট মোস্তাাকিম পিয়াসের গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নের সাদেকপুর গ্রামে। তিনি শৈলকুপার ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী শৈলকুপা পাইলট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক শেষ করে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। এরপর পড়ালেখা শেষে যোগদেন বাংলাদেশ বিমানে।মাত্র ৪ বছর আগে বিমানে যোগ দিয়েছেন তিনি। তরুণ হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেননি সেদিন। এই তরুণ পাইলট একদিন ক্যাপ্টেন নওশাদের মতো আরও সুখ্যাতি অর্জন করবে বলে মনে করছেন বিমানের বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে সেদিনের এমন ভয়াবহ আর চাঞ্চল্যকর ঘটনা জানাজানির পর থেকে ফার্স্ট অফিসার মোস্তাাকিম পিয়াসের গ্রাম সাদেকপুর সাব্বাস ধ্বনিতে মুখোরিত, গর্বিত তার গ্রামের মানুষ আর স্থানীয়রা। প্রশংসা করে চলেছে এমন সাহসী ভুমিকার। কাঁচেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সালাউদ্দিস জোয়ার্দার মামুন বলেন, দুঃসাহসিক সেই মূহুর্তে এমন পাইলটের জন্য আমরা গর্বিত। তার পেশাগত দক্ষতার কথা সবার মুখে মুখে ফিরছে বলেও জানান তিনি। সেদিন যেভাবে ককপিটে বিমানের হাল ধরেন ফার্স্ট অফিসার মোস্তাাকিম গত ২৭ আগষ্ট বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজে ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে মাস্কাট-ঢাকা পথে আসছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট। ভারতের রায়পুরের আকাশে থাকাকালে হুট করেই নিথর হয়ে পড়েন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। একদিকে ক্যাপ্টেন নওশাদের নিথর দেহ, অন্যদিকে ১২৪ জন যাত্রী। ঘাবড়ে না গিয়ে তখনই ককপিটের কন্ট্রোল নেন সঙ্গে থাকা ফার্স্ট অফিসার। ঘোষণা করেন মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে। ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আম্বেদকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মোস্তাকিম পিয়াস নিরাপদে অবতরণ করান উড়োজাহাজটি। বিজি ০২২ ফ্লাইটে থাকা সেই ক্রুদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেদিনের বিস্তারিত ঘটনা। ফ্লাইটিতে ১২৪ জন যাত্রী ছাড়াও ২ জন ককপিট ক্রু ও ৬ জন কেবিন ক্রু ছিলেন। হুট করে ককপিট থেকে ফার্স্ট অফিসার জানান ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ককপিটে গিয়ে কেবিন ক্রুরা বুঝতে পারে তিনি মারাত্মকভাবে হার্ট অ্যাটাক করেছেন। তার নিজের যে খারাপ লাগছে, কিংবা অসুস্থ বোধ করছেন- এ কথা বলারও সুযোগও পাননি , সিটে ঢলে পড়েন।এমন অবস্থায় ফার্স্ট অফিসার মোস্তাাকিম পিয়াস মেডিক্যালে ইমার্জেন্সিতে ঘোষণা করেন। ক্যাপ্টেন নওশাদের সিভিআর হার্ট অ্যাটাকের পর দ্রুত তার চিকিৎসার জন্য ১২৪ জন যাত্রী নিয়ে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হন এই তরুণ ফার্স্ট অফিসার।
জানা গেছে, বিমানটি জরুরি অবতরণের জন্য মোস্তাাকিম পিয়াস পেশাগত দক্ষতা দেখিয়ে কন্ট্রোল টাওয়ারে যোগাযোগ শুরু করেছিলেন। নওশাদ অসুস্থ হওয়ার ২৫ মিনিটের মধ্যে নাগপুর এয়ারপোর্টে নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজ। আগে থেকেই বিমানবন্দরে অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত ছিলো। রানওয়েতে নামা মাত্রা দ্রুত ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইউমকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্স করে হাসপাতলে পাঠানো হয়। কিন্তু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল। এমন মৃত্যু যেন ছোট গল্পের মতো হয়ে থাকল, শেষ হয়েও হইলো না শেষ! সেই দুঃসাহসিক ঘটনায় বিমানের ফার্স্ট অফিসার ঝিনাইদহের গর্ব মিরাজুর মোস্তাাকিম পিয়াস, তার বাবার নাম আব্দুর রব। তিনি জানান তার দুই ছেলে মোস্তাকিম পিয়াস ও রাফিউর রহমান। রাফিউর ছোট ছেলে, সে ঢাকায় দশম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত। পাইলট মোস্তাকিম পিয়াসের বাবা আব্দুর রব মালয়েশিয়া প্রবাসী, দীর্ঘ বছর মালয়েশিয়া থেকে সাম্প্রতি দেশে এসেছেন। শৈলকুপার কাঁচেরকোলের সাদেকপুর গ্রামে তাদের মূল বাড়ি আর শৈলকুপা শহরের কবিরপুরে নতুন বাড়ি করেছেন। বর্তমানে সেখানেই তারা থাকেন।