চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তবে সোনার দেশ গঠনে দরকার সোনার মানুষের। তাই স্বাধীন দেশে ছেলে-মেয়েদের সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে মেয়েদের সুশিক্ষিত করে তুলতে হবে। আর ইয়াবাসহ সকল অপরাধ থেকে দূরে রাখতে হবে সন্তানদের।
শুক্রবার সকালে কক্সবাজার সাগর পাড়ের মোটেল উপলের কনভেনশন হলে ১৯৯৩ সালে এসএসসি উত্তীর্ণ সতীর্থদের সংগঠন ‘আমরা-৯৩ কক্সবাজার’ এর পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেন- ‘আমি কক্সবাজারের সন্তান। শহরের কস্তুরাঘাট এলাকায় আমার বেড়ে উঠা। কিন্তু বেশিদিন এখানে থাকতে পারিনি। ওইসময় মেয়েদের পড়ালেখা করা অনেক কঠিন ছিল। সেই সময় মৌলবাদীদের আখড়া ছিল এখানে। সামাজিক পরিবেশ অনুকূলে ছিল না। অনেক কুসংস্কার ছিল।’
উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার সে দিনের স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন-‘এমন অবস্থা ছিল যে, মামা-চাচাদের ভয় ও লজ্জায় কোনো প্রেম পর্যন্ত করতে পারিনি। তবুও কিন্তু দুঃখ নেই। তবে পরিবার সব সময় তাগিদ দিত-পজিটিভ হতে হবে। এজন্য কেবল লক্ষ্য ছিল বড় হওয়ার। সাগরের ঢেউগুলোও যেন বলত বড় হও, বড় হও। অবশেষে সকলের দোয়ায় অনেক বড় হয়েছি।’
তিনি বলেন, এত সব বাধা ডিঙিয়ে চট্টগ্রামের খাস্তগীর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য পাড়ি জমাই। আমি চট্টগ্রামে পড়েও সংকোচ বোধ করিনি। কারণ এখানকার মানুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে চলাফেরা করেছে। সে সময় পারিবারিক চাপও ছিল অনেক। সামাজিক কারণে পরিবার আমাদের পুরোপুরি ছেড়ে দেননি।
তিনি বলেন, আজকের প্রাণের এই স্ফূরণ সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগাবে। আজকে সবাই মন বাড়িয়ে কাছে এসেছে। এখনো সবার মাঝে তারুণ্য খেলে যাচ্ছে। মানব জীবনের সবচেয়ে পরম দায়িত্ব হলো এটাকে যাপন করা। এই যাপিত জীবন উপভোগ্য ও আনন্দময় হলেই জীবনের সার্থকতা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন জীবনই প্রত্যাশা করেছিলেন।
‘আমরা-৯৩ কক্সবাজার’-এর আহবায়ক আজিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আমিন আল পারভেজ ও বাংলা একাডেমীর আজীবন সদস্য কবি আদিল চৌধুরী। সকালে ‘৯৩ বন্ধুত্বের বন্ধন, হৃদয়ে স্পন্দন’ স্লোগানকে ধারণ করে বের করা হয় বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। পরে জাতীয় সংগীত, বেলুন ও শান্তির পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
দিনব্যাপী বন্ধুরা মেতেছিল আড্ডা ও সেলফিবাজিতে। সবার সামনে ভেসে উঠে স্কুল জীবনের নানা স্মৃতি। অনেকেই এসময় আবেগময় হয়ে উঠে। কর্মব্যস্ততা ভুলে দিনটিতে সবাই জীবনের নানা সুখ-দুঃখ নিয়ে বিশদ আলোকপাত করা যায়। এসময় ভেদাভেদ ভুলে সবার কণ্ঠে একই ধ্বনিতে উচ্চারিত হয় অকৃত্রিম বন্ধুত্বের জয়গান। মিলন মেলায় প্রায় দুই হাজার সতীর্থ আনন্দ উৎসবে মেতেছিলেন।