1. [email protected] : দেশ রিপোর্ট : দেশ রিপোর্ট
  2. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  3. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  4. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন

সাদা মনের ধলা বিবি, ভিক্ষার আয় দান করেন অসহায়দের!

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১

ধলা বিবি। নামের মতই সাদা বৃদ্ধ এই মানুষটির মন। চোখে মোটা কাঁচের চশমা, সারা মুখে বলিরেখা। একহাতে থলে। হাড় জিরজিরে দুর্বল আরেক হাতে লাঠি। আশি বছরের উর্ধ্বে বয়স তার। এই লাঠি ভর করে পায়ে হেঁটে, গ্রামে-গ্রামে, এ বাড়ি ও বাড়ি ভিক্ষা করেন তিনি। কেউ দেন চাল-আলু, এটা-ওটা, কেউ টাকা। অনেকে দেন জাকাতের শাড়ি। বৃদ্ধা মানুষটির জীবন চলে ভিক্ষার আয়ে। তবে, যা আয় করেন তার বড় অংশই আবার দান করে দেন মানুষের কল্যাণে। সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। সংসারে তার দেখাশোনার মতো তেমন কেউ নেই। এক মেয়ে আছে। সে থাকে শ্বশুর বাড়িতে। পরোপকারী ধলা বিবির বাড়ি যশোরের অভয়নগর উপজেলার বর্ণি গ্রাম সংলগ্ন নড়াইল জেলার বিছালী গ্রামে। ভিড়্গুক মানুষটি আড়াই যুগ ধরে এই মহৎ কাজ করে আসছেন।

তার এই কাজকে সমাজ সচেতন মানুষ সাধুবাদ জানিয়ে বলছেন, ভিক্ষুক ধলা বিবির এমন কাজ সমাজের জন্যও শিক্ষণীয়। পরিমাণ সামান্য হলেও মানুষের উপকারে তার নিয়মিত এই অংশগ্রহণের মানসিকতা-মহত্ব অমূল্য, এর দাম অপরিসীম, তিনি সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন, শুধু সামর্থ্য থাকলেই হয় না, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা, মানবিকতাও থাকতে হয়।

গত বৃহস্পতিবার সকালে বিছালী গ্রামে ধলা বিবির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়। তিনি ভিক্ষা করতে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তখনও তার সকালের খাওয়া জোটেনি। মানুষটির সম্বল বলতে ভাঙ্গা-চোরা টিন আর বাঁশ দিয়ে কোনরকমে তৈরি ছোট্ট একটা ঘর। একটি খাট, কাঁথা বালিশ, আর অনেক পুরাতন কয়েকটি অ্যালুমুনিয়ামের হাঁড়ি, জগ, মগ, মাটির কলস ও মাটির চুলো।

তিনি কানে একটু কম শোনেন। ভিক্ষা কেন করেন? এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘ভিক্ষে এমনি এমনি করিনে। আমার দেখার কেউ নেই। স্বামী জালাল মুল্লার সাথে ছাড়াছাড়ি হইছে ৪০ বছর আগে। তখন তে বাপের বাড়ি। একটা ছেলে ছিলো সেও মইরে গেছে অনেক দিন। ভাইগের অবস্থা ভালোনা। তাগের ঠিক মতোন দিন চলে না।’

আপনি ভিক্ষা করে যা আয় করেন, তা আবার দান করে দেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বললেন, ‘মইরে গেলি সাথে কিছুই যাবে না। আমি চাইয়ে চিন্তে চলি। কেউ চাইল দেয়, কেউ টাকা দেয়, কারোর বাড়ি গেলি কয়ডা খাতি দেয়। কোনরকমে চলি। আর যা থাকে তা এতিমখানায় এতিমগের, অসুবিদেই (অসুবিধায়) থাকা মানুষগের আর মসজিদি দিয়ে দিই। মানুষির জন্যি কিছু করা।’

ধলা বিবির কাছ থেকে উপকৃত বিছালী গ্রামের বাসিন্দা শরিফা বেগম বললেন, ‘ধলা বিবি ভিক্ষে করে। আবার ভিক্ষের পাওয়া টাকা, পয়সা, শাড়ি, চাইল নিজির দিকি না তাকাইয়ে অসহায় মানষিরি দেয়। কয়দিন আগে আমারেও একটা শাড়ি দেছে’।

এ ব্যাপারে কথা হয় আয়েশা সিদ্দিকীয়া মাদরাসা ও এতিমখানার সুপার কারী মোস্তফা কামালের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা তাকে ধলা ফুফু বলে ডাকি। তিনি মাঝে মাঝেই এসে আমাদের এখানে থাকা এতিমদের জন্য কয়েকশ করে টাকা, চাল দিয়ে যান। তার দানের পরিমাণ হয়তো কম। ভিক্ষার আয়ে তার নিজের ঠিকমতো চলে না, তারপরও তিনি এভাবে দান করায় আমার মতো অন্যরাও আশ্চর্য হন। তার মতো মানুষকে দান করতে দেখে অনেক সামর্থ্যবান মানুষ এই এতিম বাচ্চাদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়ান।’

এ ব্যাপারে গ্রামের বাসিন্দা নজরুল চর্চা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘অগ্নিবীণা’র প্রতিষ্ঠাতা এইচএম সিরাজ বলেন, ‘সমাজের প্রতি আমাদের যে একটা দায়বদ্ধতা আছে, এই বিষয়টি ধলা বেগম আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন। আমরা-অনেক ধনী মানুষরা শুধু জৌলুস প্রকাশ করা নিয়ে ব্যস্ত থাকি। অথচ ধলা বিবি যে ঘরে থাকেন, তার সে ঘরটিও বসবাসের অনুপযুক্ত। তিনি ভিক্ষা করে চলেন, আবার তার মধ্যে দান করার একটা প্রবণতা আছে। তার পরোপকার, দানের পরিমান সীমিত হলেও এর মূল্য অসংখ্যগুণ। আমাদের সমাজ শিক্ষা নিতে পারে ধলা বেগমদের মতো মানুষদের কাছ থেকে।’

এ বিষয়ে বিছালী গ্রামের বাসিন্দা ও বিছালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কার মোল্লা বলেন, ‘ধলা বিবি ৩০ বছরের বেশি সময় ভিক্ষা করছেন। আবার তখন থেকেই এই ভালো কাজগুলো করছেন। তিনি একজন সত্যিকারের মানুষ। ধলা বিবি শুধু ভিক্ষাই করেন না। ভিক্ষাবৃত্তির ভেতর দিয়েও বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের ভালো মন্দের খোঁজ খবর নেন।’ জীবনের শেষ প্রান্তে আসা মহৎহৃদয় ধলা বিবির জন্য সরকারি সহযোগিতাও কামনা করেন তিনি।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৩ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব