প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে হত্যাচেষ্টার মামলায় ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামি ও ১৪ বছর দণ্ডিত দুই আসামির সাজাও বহাল রাখা হয়েছে। ১৪ বছর দণ্ডিত আরেক আসামিকে খালাস দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
শুনানি শেষে বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রায় দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রায় দেওয়া শুরু হয়। ভাষার মাসে আদালত বাংলায় রায় দেন।
এর আগে ১ ফেব্রুয়ারি ডেথ রেফারেন্স ও আসামির আপিলের ওপর শুনানি শেষে আদালত ১৭ ফেব্রুয়ারি রায়ের জন্য দিন রাখেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুনানি শুরু হয়।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা আসামিরা হলেন, ওয়াসিম আখতার ওরফে তারেক হোসেন ওরফে মারফত আলী, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম ওরফে রাশেদুজ্জামান খান ওরফে শিমন খান, ইউসুফ ওরফে মোসহাব মোড়ল ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে মুফতি রউফ ওরফে আবদুর রাজ্জাক ওরফে আবু ওমর।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মেহেদী হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদের সাজা বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ১৪ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া তিনজনের মধ্যে হাইকোর্ট সারওয়ার হোসেনকে খালাস দিয়েছেন। ১৪ বছর সশ্রম কারাদণ্ড পাওয়া আনিসুল ইসলাম ওরফে আনিসের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। আর মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমানের বিষয়ে আদালত বলেছেন, নথিপত্রে দেখা যায় ২০০০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় মফিজকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তখন থেকে অদ্যাবধি তিনি কারাগারে আছেন। বিচারিক আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেন। কারাবিধি অনুসারে তাঁর দণ্ড ভোগ হয়ে থাকলে ও অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাঁকে মুক্তি দিতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ শুনানিতে ছিলেন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও আইনজীবী মো. আহসান। পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত হিসেবে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী অমূল্য কুমার সরকার।
রায়ের পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১০ জন, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ও ১৪ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুজনের সাজা বহাল রেখেছেন। ১৪ বছর দণ্ডিত আরেক আসামিকে খালাস দেন আদালত।
মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা চার আসামির পক্ষে আইনজীবী আহসান বলেন, আদালতের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পর মক্কেলদের সঙ্গে আলোচনা করে আপিল করার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট বিচারিক আদালত রায় দেন। রায়ে ১০ জনকে ‘ফায়ারিং স্কোয়াডে’ (গুলি করে) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়ে। এ ছাড়া ১ জনকে যাবজ্জীবন ও ৩ জনকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের পর ডেথ রেফারেন্সের জন্য রায়সহ নথিপত্র ওই বছরের ২৭ আগস্ট হাইকোর্টে পৌঁছায়। পরদিন সংশ্লিষ্ট শাখা এসব ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত করে। শুনানির পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে পেপারবুক (মামলার বৃত্তান্ত) তৈরি করা হয়। অন্যদিকে রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা তিনটি আপিল ও সাতটি জেল আপিল করেন।
২০০০ সালের ২২ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান সরকারি আদর্শ কলেজমাঠ প্রাঙ্গণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার প্যান্ডেল তৈরির সময় শক্তিশালী একটি বোমা দেখা যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল ৭৬ কেজি ওজনের ওই বোমা উদ্ধার করে। পরদিন ২৩ জুলাই ৪০ কেজি ওজনের আরেকটি বোমা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই কোটালীপাড়া থানার পুলিশ হত্যাচেষ্টা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা করে। ২০১০ সালে গোপালগঞ্জ আদালত থেকে মামলা দুটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।