নানা অভিযোগে ছাত্রলীগের ৩২ নেতা-নেত্রীকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার এক বছরের বেশি সময় পর কমিটির শূন্য পদে ৬৮ জনকে মনোনীত করেছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
ই ৬৮ জনের মধ্যে ২২-২৩ জনের মতো বিতর্কিত ব্যক্তি রয়েছেন—এমন অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগের কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের একটি অংশ।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করে অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের একাংশ৷ ‘ছাত্রলীগকে বিতর্কমুক্ত ও শুদ্ধিকরণের নামে চলমান অপরাজনীতি ও অপসংস্কৃতির প্রতিবাদে’ এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়৷ ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি পাওয়া এসব নেতার দাবি, অব্যাহতি পাওয়া অন্যান্য নেতা এবং খোদ কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক পদধারী নেতাও তাঁদের সমর্থন করছেন, কিন্তু ‘নানাবিধ কারণে’ তাঁরা প্রকাশ্যে এসে সমর্থন দিতে পারছেন না।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া দুই নেতা—আহসান হাবীব ও মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী। হাবীব ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক আর মাহমুদ ছিলেন উপদপ্তর সম্পাদক। দ্রুত নতুন সম্মেলনের মাধ্যমে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আহসান হাবীব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বিতর্কিত বলে আমাদের ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচার-বিশ্লেষণের পর যে কমিটি করা হলো, সেখানে কী করে বিতর্কিত ব্যক্তিরা পদ পেলেন, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তাহলে কি কোনো মহলের চাপে এটি করা হলো।
শূন্য পদে মাই ম্যানদের পদোন্নতি
মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী অভিযোগ করেন, ‘শূন্য পদে মাই ম্যানদের পদোন্নতি দিয়েছেন আল নাহিয়ান ও লেখক৷ এখন পর্যন্ত আমরা জানি না, ঠিক কী অভিযোগ বা অপরাধে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শূন্য পদে অসংখ্য বিতর্কিত ও গঠনতন্ত্রবহির্ভূত ব্যক্তিকে পদায়ন করা হয়েছে। নতুন করে বিতর্কিতদের পদায়নের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু বিশেষ সিন্ডিকেটের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই এটি করা হয়েছে।
২২–২৩ জনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শূন্য পদে মনোনীত ২২-২৩ জনের নামে নানা অভিযোগ আছে দাবি করে মাহমুদ বলেন, সহসভাপতি সাগর হোসেন চাঁদাবাজ ও মাদকাসক্ত। সহসভাপতি রানা হামিদ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ছাত্রলীগের পদ নিতে রাজি হননি। সহসভাপতি আনন্দ সাহা একজন ঠিকাদার। দেবাশীষ বিশ্বাস সিদ্ধাথ ঢাকা বিশ্বাবিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকীর সাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগে আজীবন ছাত্রত্ব বাতিল সহ জেলও খেটেছেন, শুভ্রদেব বিবাহিত, বয়সোত্তীর্ণ ও মামলার আসামি ছিলেন। সহসভাপতি জিয়াসমিন শান্তা ছাত্রলীগের হল পর্যায়ের একজন প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগে হওয়া মামলার আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও আছে। শাহারিয়ার সিদ্দিক বিবাহিত ও চাকরিজীবী। সহসভাপতি মিজানুর রহমান পিকুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে বহিষ্কৃত হওয়ার অভিযোগ আছে। সহসভাপতি রাকিবুল হাসানের বিরুদ্ধে ছাত্রদল করার অভিযোগ রয়েছে। সহসভাপতি মহিন উদ্দিন বয়সোত্তীর্ণ। দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা বয়সোত্তীর্ণ। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা–বিষয়ক উপসম্পাদক রাজেষ বৈশ্য চাকরিজীবী। সহসম্পাদক মীর সাব্বির, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক শাহেদ খান, গণশিক্ষাবিষয়ক উপসম্পাদক ওয়াহিদ খান ও সদস্য সাজিদ আহমেদ বিবাহিত। তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক আবদুর রশিদের ছাত্রলীগে এটিই প্রথম পদ।
ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি প্রকাশের প্রায় ১০ মাস পর ২০১৯ সালের ১৩ মে সংগঠনটির ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটি ঘোষণা করেন সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। কমিটিতে পদবঞ্চিত ও প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা সেদিন সন্ধ্যায় মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে রেজওয়ানুল ও রাব্বানীর অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে সংগঠনের কয়েকজন নারী নেতাসহ ১০-১২ জন আহত হন। এরপর বিতর্কিতদের বাদ দেওয়াসহ চার দফা দাবিতে কয়েক দফায় অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন করেন পদবঞ্চিতরা।
পরে নৈতিক স্খলন, উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবিসহ নানা অভিযোগে একই বছরের সেপ্টেম্বরে রেজওয়ানুল ও রাব্বানীকে পদচ্যুত করা হয়। তাঁদের পর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্য। একই বছরের ২১ ডিসেম্বর ৩২ নেতা-নেত্রীকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেন আল নাহিয়ান ও লেখক। ওই ৩২ জনের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল। আর ১১ জন পদ থেকে অব্যাহতি নিতে নিজেরাই আবেদন করেছিলেন। এর এক বছর এক মাসের বেশি সময় পর গত রোববার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সেই ৩২ পদসহ শূন্য হওয়া মোট ৬৮টি পদ পূরণ করা হয়।