দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের রাজধানীর সাথে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রুট মাওয়া কাওড়াকান্দি নৌরুট। এই রুটটিতে এক সময় শুধু ফেরি চলাচল করতো। পরে ফেরির সাথে যুক্ত হয় ইঞ্জিনচালিত ট্রলার, এরপর লঞ্চ। সর্বশেষ সংযোজন হয় স্পিডবোট।
এই রুটের ঘাট পরিবর্তন হয়েছে একাধিকবার। এখন এই রুটের মাদারীপুর অংশের ঘাটের নাম বাংলাবাজার এবং মুন্সিগঞ্জ অংশের নাম শিমুলিয়া। এই শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌরুটে কোনো স্পিডবোট চালকের নেই লাইসেন্স, বোট চলাচলের নেই অনুমতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৯০ এর দশকে এই নৌরুটে ফেরির পাশাপাশি সাধারণ যাত্রীদের পারাপারে বিকল্প বাহন ছিল ট্রলার। পরবর্তী সময়ে আধুনিক বাহন হিসেবে যুক্ত হয় লঞ্চ। ২০০২ সালের দিকে স্পিডবোট জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। সেই সময়ে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি বোট চলাচল করতো এই নৌরুটে। দ্রুত সময় পারাপারের কারণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে স্পিডবোট।
যাত্রীদের কাছেও চাহিদা বাড়ে এই বাহনটির। জনপ্রিয়তার সাথে সাথে স্পিডবোটের সংখ্যা ও ভাড়ার পরিমাণ বাড়তো পাল্লা দিয়ে। সাথে বাড়তে থাকে স্পিডবোট দুর্ঘটনার মাত্রাও। প্রাণহানী, নিখোঁজ ও পঙ্গুত্বের সংখ্যাও বাড়ে। এই নৌপথ দিয়ে দৈনিক গড়ে ৩০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে। যাত্রীদের বড় একটি অংশ পারাপার হয় স্পিডবোটে।
বর্তমানে এই নৌপথে প্রায় ২৫০টি স্পিডবোট চলাচল করে। কিন্তু অবাক করা বিষয় এই নৌরুটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে স্পিডবোট চলাচলের কোনো সরকারি অনুমিত নেই। স্থানীয় প্রশাসনের মৌখিক অনুমিত নিয়েই দিনের পর দিন চলছে স্পিডবোট। একারণে নেই সরকার নির্ধারিত কোনো নীতিমালা। নিবন্ধিত না থাকায় স্পিডবোটের সঠিক সংখ্যা সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তবে উভয় ঘাট মিলিয়ে আড়াইশ’র বেশি রয়েছে বলে ঘাট সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, স্বল্প সময়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় বিধায় এটি যাত্রীদের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি রুট। বিআইডব্লিউটিএ’র তথ্য অনুযায়ী, এই নৌরুটে নিয়মিত চলাচল করছে ৮৬টি ছোট-বড় লঞ্চ, ১৬টি ফেরি।
সরেজমিনে ঘাট ঘুরে জানা গেছে, বোট চালানোয় কোনো প্রশিক্ষণ নেই তাদের। আর চালকদের বেশির ভাগই উঠতি বয়সী তরুণ। বিশেষ করে পদ্মার ঘাট এলাকার এক শ্রেণির বখাটে, মাদকাসক্ত যুবকরাও স্পিডবোট চালক হিসেবে রয়েছে। আর এদের কাছেই বিভিন্ন সময়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। নিয়ন্ত্রণহীন গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনাও। তাছাড়া প্রতিটি ট্রিপেই ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী বহন করে এসব স্পিডবোট। নেই কোনো কর্তৃপক্ষের তদারকি।
এদিকে, এই নৌপথে চলাচলরত ৫০টির মতো স্পিডবোট বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক লাইসেন্স নিয়েছে। যে কটির লাইসেন্স আছে, তারও আবার নবায়ন নেই। ফলে চলাচলরত স্পিডবোটগুলোর সব কয়টি অবৈধ।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বাংলাবাজার ঘাটের ট্রাফিক পরিদর্শক আক্তার হোসেন বলেন, উভয় ঘাটে আড়াইশ স্পিডবোট চলে, যার একটিরও লাইসেন্স বা কোনো কাগজপত্র নেই।
বিআইডব্লিউটিএ’র শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী পরিচালক (নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ) মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৫০টি স্পিডবোটের লাইসেন্স নেওয়া। তবে এগুলোর হয়তো নবায়ন নেই। এখানে আমাদের লাইসেন্স দিতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা দ্রুত স্পিডবোটগুলো লাইসেন্সসহ চলাচলে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসব।’
বাংলাবাজার স্পিডবোট মালিক সমিতির সভাপতি ও পাঁচ্চর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘আমাদের পাড়ে (বাংলাবাজার) ১০টি স্পিডবোটের লাইসেন্স দেড় বছর আগে দিছে বিআইডব্লিউটিএ। এরপর এক বছর আগে ৩৯টি বোটের লাইসেন্সের জন্য কাগজপত্র ও তালিকা নেয়। চালকের প্রশিক্ষণের জন্য নামের তালিকা নেয়। কিন্তু নতুন করে আর লাইসেন্সও দেয়নি। আর চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও নেয়নি।
উল্লেখ্য, সোমবার সকাল ৬টার দিকে শিমুলিয়া থেকে যাত্রী বোঝাই একটি স্পিডবোট কাঁঠালবাড়ী ঘাটে নোঙর করে রাখা একটি বাল্কহেডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে স্পিডবোটের ২৬ যাত্রী নিহত হয়।