বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়। কিন্তু পুরো গাজীপুর জেলার মানুষের দৃষ্টি এখন গণভবনের দিকে। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার এই বৈঠকে গাজীপুরের মেয়রের বিষয়ে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় তা নিয়েই চরম উৎকণ্ঠা।
মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষ-বিপক্ষের নেতাকর্মী, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালতপাড়া, ট্রেন-বাস, হাট-বাজার, চায়ের দোকান সর্বত্র একটাই আলোচনা ‘শাস্তি না ক্ষমা’ পাচ্ছেন মেয়র।
সম্প্রতি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মেয়র জাহাঙ্গীরের কিছু উক্তির একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামে আওয়ামী লীগের একটি অংশ। মেয়র দাবি করে আসছিলেন, ওই অডিও এডিটিং করে তাঁকে হেয় করার জন্য ছেড়েছে একটি পক্ষ। এ ঘটনায় দল মেয়রকে কারণ দর্শনোর নোটিশ দেয়। নির্ধারিত সময়ে জবাব দেন মেয়র। তাঁর বিষয়ে আজ শুক্রবার সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদ।
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন বলেন, ‘উন্নয়ন এবং জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে মেয়রের। তিন বছরে তিনি ৮০০ কিলোমিটার সড়ক ও কয়েক শ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করেছেন। অতিবৃষ্টিতে গত জুনে গাজীপুরের সড়ক-মহাসড়ক যানজটে অচল ছিল। মেয়র ২০ ফুট গভীর খাদ ভরাট করে দেড় মাসে টঙ্গীর বনমালা সড়ক তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আশা করছি এসব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে দল।’
গাজীপুর আদালতের প্রবীণ আইনজীবী মো. আমজাত হোসেন বাবুল বলেন, ‘টঙ্গী ছাড়া নগরীর কোথাও মেয়রের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়নি। যারা আন্দোলন করেছে তারা যুবলীগ-ছাত্রলীগ সমর্থক। ছাত্রলীগ-যুবলীগ কিভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে তা আমার বোধগম্য নয়। ১৯ তারিখের পর মেয়র পদ হারাচ্ছেন—এমন কথা ছড়িয়ে একটি পক্ষ এখনই চাঁদাবাজি ও দখলদারির ছক কষতে শুরু করেছে।’
গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা পরিষদের প্যানেল মেয়র এস এম মোকছেদ আলম বলেন, ‘আমরা তাঁকে স্বপদে বহলের দাবি জানাই কেন্দ্রীয় সংসদের কাছে।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি লাবিব গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. সালাহউদ্দিন আলমগীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, একটা সময় চাঁদাবাজ ও ঝুট সন্ত্রাসীর আতঙ্কে থাকতে হতো কারখানা মালিকদের। জাহাঙ্গীর আলম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর চাঁদাবাজ ও ঝুট সন্ত্রাসীদের থেকে তাঁরা নিরাপদে আছেন। তিনি না থাকলে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী চক্রটি আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা তাঁর।
বিজিএমইর ভাইস প্রেসিডেন্ট সাদমা গ্রুপের মালিক মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘নগরীর আড়াই হাজার কারখানায় ২৪ লাখ শ্রমিক কাজ করে। যেকোনো সমস্যায় পড়লে আমরা মেয়রকে পাশে পাই। ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে আওয়ামী লীগ মেয়রের বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে বলে আশা করি।’ এদিকে দলের কার্যনির্বাহী পরিষদের সভাকে কেন্দ্র করে মেয়রবিরোধীরা উজ্জীবিত। আগের মতো প্রকাশ্যে তৎপর না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁরা মেয়রবিরোধী নানা প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন। তাঁদের দাবি, মেয়র পদ ও দলীয় পদ দুটোই হারাচ্ছেন মেয়র।