করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে প্রথম দফার সাত দিনের ‘লকডাউনের’ ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে রাজধানীর বায়ুমণ্ডলে। এই সময়ে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণ কমেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ।
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) করা জরিপে দেখা গেছে, গত ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সাত দিনে বায়ুদূষণের মান ১ থেকে ৪ এপ্রিল (লকডাউনের আগে) এবং ৫ থেকে ৮ এপ্রিলের (সীমিত লকডাউন) চেয়ে যথাক্রমে প্রায় ৩০ ও ৪৫ শতাংশ কমেছে। তবে সীমিত লকডাউনের সময় লকডাউনের আগের সময়ের তুলনায় প্রায় ২৭.৫ শতাংশ বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছিল।
ইউএসএইড ও ইউকেএইডের অর্থায়নে পরিচালিত একটি প্রকল্পের আওতায় স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিদিন ঢাকায় দুটি করে মোট ১০টি এলাকায় এই বায়ুর মান পরিমাপ করা হয়। দেখা যায়, ঢাকায় লকডাউন শুরুর পর ১৪ এপ্রিল থেকে দিনের কোনো কোনো সময় ঢাকার কোনো কোনো এলাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বায়ুদূষণ কমেছে এবং সারা দিনের হিসেবে প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে।
লকডাউনের সময়ে বায়ুদূষণ কমার চারটি কারণ বলছে ক্যাপস। প্রথমত, লকডাউনের সময়ে যত্রতত্র রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সংস্কারকাজ ও রাস্তা নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ভাগের উৎস হলো অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি এবং সমন্বয়হীন ও পরিকল্পনাবিহীন নির্মাণকাজ। দ্বিতীয়ত, ১৪ তারিখ থেকে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই ঢাকা শহরের যানবাহনের প্রায় ৯৫ শতাংশই বন্ধ রয়েছে। ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশের উৎস এই শহরের ফিটনেসবিহীন প্রায় পাঁচ লাখ ৬০ হাজার যানবাহন। তৃতীয়ত, রাস্তার ওপরে জমে থাকা যে ধুলাবালি যানবাহনের সঙ্গে উড়তে থাকে, সেই ধুলাবালি ওড়াও অনেক কমছে, যার পরিমাণ প্রায় ১০ শতাংশ। চতুর্থত, স্বাভাবিক অবস্থায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য পোড়ানো হয়। লকডাউনের সময় সে বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে না বলে বায়ুদূষণ কমছে। বায়ুদূষণের প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে আবর্জনা পোড়ানো বন্ধ হওয়ায়।
ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চাইলেই নানা পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বায়ুদূষণ ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। যদিও সেটা সময়সাপেক্ষ।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বায়ুদূষণের উৎসগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি, এই উৎসগুলোকে নিয়ে যদি কমপক্ষে পাঁচ বছরের একটি পরিকল্পনা নেওয়া যায়, তাহলে প্রতিবছর কমপক্ষে ১০ শতাংশ করে বায়ুদূষণ কমানো সম্ভব।’