গ্রাম মানেই চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজের ছায়া ঢাকা পরিবেশে গড়ে উঠেছে একটি গঞ্জের হাট। শহরের যান্ত্রিকতার জঞ্জাল ছেড়ে ছুটির দিনে ঘুরে আসতে পারেন এ হাট থেকে। যেখানে গেলে আপনি ফিরে পাবেন গ্রামীণ আবহ। আর সন্ধ্যায় পাখির কিচির-মিচির শব্দ আপনার মনে এনে দেবে অন্যরকম প্রশান্তি।
গ্রামীণ এ হাটের নাম ‘নীলা মার্কেট’ বা ‘নীলা বাজার পূর্বাচল’। ঢাকা-রূপগঞ্জ সড়কের ৩০০ ফিট এলাকায় শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের পাশেই গড়ে উঠেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য বহনকারী এ বাজার। গ্রামীণ হাটের অবয়বে গড়ে ওঠা এ হাটে হরেকরকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন দোকানিরা। সেই আকর্ষণেই ছুটে আসেন ক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা সরগম থাকে পুরো হাট।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাটির তৈজসপত্র, দা, বঁটি, হাড়ি-পাতিল, বাঁশের তৈরি পণ্য, কুটির শিল্পের সামগ্রীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। বাজারের একটু ভেতরে গিয়ে দেখা গেছে, লেবু, কলা, পেঁপে, বেল, ডাব, নারিকেল, আখসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন রকমের ফলও ওঠে এই হাটে।
খাল-বিল-নদী থেকে আহরণ করা নানা রকমের দেশীয় মাছের পাশাপাশি টাটকা সবুজ শাক-সবজিও দেখা যায় এ হাটে। এ ছাড়া রূপগঞ্জের গ্রামীণ জনপদ থেকে আসা টাটকা মাছ, শুঁটকি, দেশি মুরগি, কবুতর, গাভির খাঁটি দুধ, খেলনাসহ মুখরোচক নানা খাবারও ওঠে হাটে।
মূলত এখানকার প্রধান আকর্ষণ হলো গরম গরম হরেক রকম মিষ্টি। এ বাজারে রয়েছে সারিবদ্ধভাবে অনেকগুলো মিষ্টির দোকান। সেখানেই চলে মিষ্টি তৈরি ও বিক্রির কাজ। এখানে ১৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে নানা স্বাদের বাহারি সব মিষ্টি পাওয়া যায়।
দেশীয় খাবারের হোটেল-রেস্তোরাঁসহ চাইনিজ খাবারের দোকানও রয়েছে। খুব অল্প দামেই পাওয়া সব ধরনের খাবার। এ ছাড়াও রয়েছে ফুসকা, চটপটি, নানা রকমের পিঠার দোকানসহ ভাজা-পোড়া খাবার। বিকেলে নাস্তা হিসেবে পাওয়া যায় অনেক রকম ভাজা-পোড়া দিয়ে মুড়ি মাখা। নানা পদের আচার নিয়েও রয়েছে একটি দোকান।
গুলশান-২ থেকে নীলা বাজারে ঘুরতে এসেছেন রাশিদা আলম (৩২)। তিনি জানান, স্বামীর কর্মব্যস্ততার কারণে গ্রামে যাওয়া হয় না খুব একটা। স্বামীর ছুটির দিনে এখানে আসার পর অল্প সময়ের জন্য গ্রামের সেই চিরচেনা রূপে ফিরে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। পাখির কিচির-মিচির শব্দ, পাশে নদী, আশপাশের ছোট ছোট ঘর। এখানে যে কেউ এলেই মনে হবে, এটা যেন একটা ছোট গ্রাম। আর এখানকার খাবার খেয়ে মনে হবে, যেন গ্রামের বাড়ির খাবারই খাচ্ছেন।
খিলক্ষেত থেকে কয়েকজন কিশোরী ঘুরতে এসেছেন নীলা মার্কেটে। ফেসবুকে অনেকের ছবি ও রিভিউ দেখে তারা এখানে এসেছেন। করোনার সময় থেকে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় অনেক দিন পর কয়েকজন বান্ধবী মিলে ঘুরতে এসে আনন্দে মেতেছেন তারা। তাদের সঙ্গে আসা এক অভিভাবক বলেন, ‘ঢাকার আশপাশেই এমন গ্রামীণ পরিবেশ আছে জানতাম না। এখানে এসে অনেক ভালো লেগেছে। বাচ্চারাও প্রাণ খুলে ঘুরছে, খেলছে। এখন থেকে সময় পেলেই এখানে আসব।’
আব্দুর রহমান (৪৫) একজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। বাড্ডা থেকে এ হাটে এসেছেন দেশীয় তরতাজা শাক-সবজি, মাছ, মুরগি কিনে নেওয়ার জন্য। তিনি এখানে সপ্তাহে একবার এসে পুরো সপ্তাহের বাজার করে নিয়ে যান। তিনি জানান, এখানকার সব কিছুই নির্ভেজাল ও তরতাজা; যা শহরের বাজারে পাওয়া যায় না।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গ্রামীণ ঐতিহ্যের অবকাঠামো দেখতে শহর থেকে অনেকেই ভিড় জমান এখানে। শহরের কাছেই গ্রামীণ পরিবেশে বিনোদনের নতুন মাত্রা দিতেই গড়ে তোলা হয়েছে এ হাট।