বর্ষা মৌসুমে আমন ধানের আবাদের পর শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে প্রায় ৪০০ একর জমি চাষাবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত টিব্বা বিল, মগ বিল, খিয়াং বিল, বেতাগীর রূপম বিল, বাঘা বিল পোমরার বারৈয়ার ঢালা বিলসহ আশপাশের অনেক বিল সেচপ্রকল্পের স্কিম ম্যানেজার ও সংশ্লিষ্টদের গাফলতির কারণে শুস্ক মৌসুমে প্রতিবছর বিলগুলো অনাবাদী থেকে যায় অভিযোগ কৃষকদের। এসব বিলগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কুলকুরমাই খাল বেতাগী খাল, বারৈয়ার ঢালা স্কিমের জন্য করা খালগুলো ভরাট হয়ে গেছে। খালে পানি নেই। পানি না থাকায় চাষাবাদের জন্য থাকা স্কিম (সেচযন্ত্র) ঘর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। রোয়াজারহাট খালের প্রবেশ মুখেই স্লুইচ গেট দীর্ঘদিন ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে ইছামতী নদী থেকে কুলকুরমাই খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। খালের বিভিন্ন স্পটে অপরিকিল্পত পাকা স্থাপনা নির্মাণ, আশপাশের বসতবাড়ির বর্জ্যে আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে কুলকুরমাই খালটি। এর বাইরেও গুমাইবিল থেকে পশ্চিমে অন্তত ৫ কিলোমিটার কুলকুরমাই খাল ভরাট হয়ে গেছে। একই অবস্থা পাশের চেংখালী খালেও। ফলে পৌরসভার মুরাদনগর ও কুলকুরমাই গ্রামের বেতাগী পোমরার আশপাশের ৪০০ একর জমি খরা মৌসুমে প্রতিবছর অনাবাদী থেকে যায় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। খরা মৌসুমে অনাবাদী থাকা এসব বিলকে আবাদের আওতায় আনতে জরুরী ভিত্তিতে কুলকুরমাই খালে ৫ কিলোমিটার ও পার্শ্ববর্তী চেংখালী খালে এক কিলোমিটার বেতাগী পোমরা খালে ২ কিলোমিটার পুনর্খনন করার প্রস্তাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবর প্রেরণ করেছে পানি ব্যবস্থাপনা এ্যাসোসিয়েশনের ইছামতি ইউনিট। জরুরী ভিত্তিতে খালের খননসহ সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ কৃষকরাও। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বোরো মৌসুমের শুরুতে টিব্বা বিল, মগ বিল, খিয়াং, রূপম বিল, বাঘা বিল, বারৈয়ারঢালা বিলসহ আশপাশের বিলের কৃষকদের পানির জন্য হাহাকার করতে হয়। অথচ কৃষকদের সুবিধার্থে মৌসুমের শুরুতে বিলের পার্শ্ববর্তী কুলকুরমাই খালে আশপাশের বিভিন্ন নদী থেকে পানি সরবরাহ করা এবং বিভিন্ন স্কিম ম্যানেজারদের সহায়তায় কৃষি জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। কিন্তু গুমাই বিলের সঙ্গে সংযুক্ত এই কুলকুরমাই খাল অধিকাংশ ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়াও এসব খালের পাড় ভাঙন, খালের গতিপথ দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে বোরো মৌসুমে খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া এই খালের রোয়াজারহাট অংশে বিকল স্লুইচ গেটের যথাযথ তদারকির অভাবে এসব বিলে প্রতিবছর অনাবাদী থাকে ৪শ’ একর জমি। এভাবে বছরের পর বছর এসব বিল অনাবাদী থাকলেও এই নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাঙ্গামাটি প উ ব বিভাগের আওতাধীন এই জমি নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই।
স্থানীয় দৈবকীনন্দন কৃষি সমবায় সমিতির সদস্য আরিফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘কুলকুরমাই খালের খনন, পাড় ভাঙন রোধ, প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় প্রায় প্রতিবছরই কুলকুরমাই খালে পানি শুকিয়ে যায়। এতে সেচের পানি সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়। বিগত কয়েক বছর ধরে এই পরিস্থিতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করায় কুলকুরমাই খাল সংশ্লিষ্ট বিলগুলোতে খরা মৌসুমে একেবারেই চাষাবাদ সম্ভব হয় না। পানি ব্যবস্থাপনার সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এই পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসায় কৃষকরা চাষাবাদে দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে।’
কুলকুরমাই খালের স্কিম ব্যবস্থাপক ছৈয়দুল হক চৌধুরী বাদশা বলেন, ‘গুমাই বিল থেকে কুলকুরমাই খালের প্রবেশ মুখেই ভরাট হয়ে গেছে। পশ্চিমে ইছামতী থেকেও প্রবেশ মুখেই একটি স্লুইচ গেট বছরে পর বছর বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর ফলে খালে পানি প্রবেশ করতে পারে না। তাই অন্তত গুমাই বিল থেকে শুরু করে খালের ৫ কিলোমিটার অংশ খনন করা এবং বিকল স্লইচ গেট মেরামত করে খালে পানির স্বাভাবিক গতিপথ সচল হবে। না হলে দিন দিন অনাবাদী জমির পরিমাণ বাড়বে এবং কৃষকরাও চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’
পানি ব্যবস্থাপনা এ্যাসোসিয়েশন ইছামতি ইউনিটের সভাপতি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কুরকুরমাই খাল ইছামতি নদীর শাখা। ৮০ দশকে খালটি খনন করা হয়েছিল। এই খালে স্কিম মেশিন বসিয়ে সেচ কাজ করা হয়। খালটি দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় আশপাশের বিলের সেচ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, উপজেলায় অনেক খাল রয়েছে। যা অনেকাংশে ভরাট হয়ে গেছে। খাল খনন আমাদের কাজ নয়। খননের বিষয়টি কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে অবহিত করা হয়েছে। বিএডিসির (কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) চট্টগ্রামের সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ দাশ গুপ্ত বলেন, ‘খরা মৌসুমে অনাবাদী জমিগুলোকে আবাদের আওতায় আনতে আমরা উপজেলা পর্যায়ে কমসূচী বাস্তবায়নে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে বরাদ্দে চেয়ে আবেদন করেছি। এর বাইরেও চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের জন্য আলাদা আরও একটি কর্মসূচী চাওয়া হয়েছে। এসব কর্মসূচী বাস্তবায়ন হলে এর আওতায় রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন খাল খনন, কালভার্ট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে অনাবাদী জমিগুলোকে আবাদের আওতায় আনা সম্ভব হবে। আগামী অর্থবছরেই এই কর্মসূচী বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করছি।