বাংলাদেশে রবীন্দ্রসংগীতের চর্চার পরিধি বাড়ছে কি কমছে তা নিয়ে মতান্তর থাকলেও রবীন্দ্রসংগীতের সমঝদার শ্রোতার সংখ্যা কিন্তু কমেনি আদৌ। নতুন প্রজন্মের একটা বড় অংশও অধুনা ঝুঁকছে রবীন্দ্রসংগীতের গীতরসে। এই উভয় শ্রেণির শ্রোতাদের কথা মাথায় রেখে এপার-ওপার দুই বাংলাতেই একের পর এক আসছে নতুন নতুন মিউজিক কম্পােজিশনের রবীন্দ্রসংগীত।
এই ধারাবাহিকতায় শ্রোতাদের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের শ্রোতাদের ভিন্নস্বাদ দিতে আসন্ন পহেলা ফাল্গুনে এবার ধ্রুব মিউজিক স্টেশন লােকসমক্ষে নিয়ে আসছে ‘হে সখা’ শিরােনামে রবীন্দ্রসংগীতের একটি পাঁচমিশালি গান। ক্লোজআপ তারকা কিশাের দাশ এবং এই প্রজন্মের শিল্পী সিঁথি সাহার সঙ্গে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন কেশব রায় চৌধুরী। রবীন্দ্রসংগীতের আঙিনায় সিঁথি সাহার পূর্ব-বিচরণ থাকলেও কিশোর দাশ প্রথমবারের মতাে রবীন্দ্রসংগীতে কণ্ঠ দিয়েছেন, আর কেশব রায় চৌধুরী কোনাে গানে কণ্ঠ দিয়েছেন জীবনে প্রথমবার।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূজা ও প্রেমপর্বের ‘হে সখা মম হৃদয়ে রহাে’, ‘ভালােবেসে সখী নিভৃতে যতনে’, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’, ‘আমি চিনি গাে চিনি তােমারে’, ‘কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া’ এবং ‘তুমি রবে নীরবে’- এই ছয়টি একতালের গান নিয়ে এই পাঁচমিশালি গানটির সংগীতায়ােজন করেছেন কিশাের দাশ নিজেই। গানটির মিউজিক ভিডিও নির্মাণ করেছেন এই প্রজন্মের প্রতিভাধর পরিচালক চন্দন রায় চৌধুরী। গানটির মিক্স-মাস্টারিং করা হয়েছে কলকাতার একটি স্টুডিও থেকে।
কেশব রায় চৌধুরী পেশায় একজন বিচারক। তিনি ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। এর আগে ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার, গোপালগঞ্জের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রথমবারের মতাে কোনাে গানে কণ্ঠ দেয়া প্রসঙ্গে কেশব রায় চৌধুরী বলেন, বাল্যকালে যথারীতি গান শেখা না হলেও বাড়ির লােকেদের সংগীতচর্চার ফলে গানের প্রতি, বিশেষ করে রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি আমার ওপর একটা সদর্থক প্রভাব পড়েছে। সেই থেকে শুনে শুনে গুনগুনিয়ে গান গাওয়া কিংবা নিজস্ব পরিমণ্ডলে টুকটাক গান করা আর সহধর্মিণীর কাছ থেকে পাওয়া অল্পস্বল্প কিছু কৌশল রপ্ত করার মধ্য দিয়েই মূলত আমার সংগীতচর্চা।
তিনি আরও বলেন, এভাবে গান করার সৌভাগ্য আমার হবে তা আমি ভাবিনি কখনও। এর জন্য আমি প্রথিতযশা শিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ দা’র প্রতি অপার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। উনার সুবাদেই ক্লোজআপ তারকা, এই সময়ের উদীয়মান সুরকার ও মিউজিশিয়ান কিশোর দাশের সঙ্গে আমার পরিচয়। মূলত তার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং অপর একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর সতত অনুপ্রেরণায় আমার এভাবে গান করার সাহস করা।
এছাড়া তিনি আরও বলেন, এই পাঁচমিশালিটি ছাড়াও ইতোমধ্যে কিশোর দাশ এবং কলকাতার প্রসিদ্ধ গিটারিস্ট রাজা চৌধুরীর সংগীতায়ােজনে আমার আরও তিনটি রবীন্দ্রসংগীতের অডিও রেকর্ডের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ভারতের জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ইমন চক্রবর্তীর সঙ্গে একটু ভিন্ন ধাঁচে করা ‘পুরানাে সেই দিনের কথা’ গানটিসহ এককভাবে ‘আমার পরান যাহা চায়’ ও ‘যে রাতে মোর দুয়ারগুলি ভাঙলো ঝড়ে’ গানগুলো রয়েছে; যেগুলাের মিউজিক ভিডিও নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হলেই পর্যায়ক্রমে রিলিজ হবে।
গানটি প্রসঙ্গে কিশাের দাশ বলেন, ক্লোজআপের সেই স্বপ্নময় যাত্রার পর থেকে এই পর্যন্ত কয়েকশ গানে কণ্ঠ দিলেও কোনােদিন আমার রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া হয়ে ওঠেনি। কেশব দা’র সঙ্গে পরিচয়ের পর থেকে দাদার সাথে গুনগুন করতে করতেই রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি অনুরক্ত হওয়া আমার; আর এভাবেই কেশব দা’র ভাবনায় এই পাঁচমিশালিটির সংগীতায়ােজন করা এবং গাওয়া।
সিঁথি সাহা বলেন, আমি আগে রবীন্দ্রসংগীত-ই করতাম এবং রবীন্দ্রসংগীতে জাতীয় পর্যায়ে আমি চারবার পুরস্কারও পেয়েছি। তবে আপামর দর্শকশ্রোতার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে হাতেগােনা কয়েকটি রবীন্দ্রসংগীত ছাড়া আধুনিক গানই করেছি সব। অনেকদিন পর আমার আবার এভাবে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া।
শেষে কিশাের দাশ এবং সিঁথি সাহা উভয়েই যােগ করেন, এর আগে আমরা বিভিন্ন প্রচলিত গানের ‘ম্যাশআপ সং’ করলেও এভাবে রবীন্দ্রসংগীতের পাঁচমিশালি গান এবারই প্রথম করেছি বলে আমরা খুব উচ্ছ্বসিত এবং গানটির সমগ্র আয়োজন শ্রোতা ও দর্শককুলের ভালো লাগবে বলে আমাদের বিশ্বাস।