প্লে অফের দৌড়ে টিকে থাকতে হলে আজকের ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না খুলনা টাইগার্সের। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে ব্যাট হাতে রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন নাইম শেখ। এই ওপেনারের সেঞ্চুরিতে রানের পাহাড় গড়ে টাইগার্সরা। আর রান-পাহাড়ে চাপা পড়েছে রংপুর রাইডার্স।
৪৬ রানের জয়ে প্লে অফের সমীকরণ জমিয়ে তুললো খুলনা। ১১ ম্যাচ থেকে তাদের সংগ্রহ ১০ পয়েন্ট। নিজেদের শেষ ম্যাচ জিততে পারলেই সেরা চারে জায়গা করে নেবে তারা। আর হারলে বিদায় নিতে হবে। খুলনা পরের ম্যাচ জিতলে কপাল পুড়তে পারে রাজশাহী বা চিটাগাংয়ের।
গ্লোবাল সুপার লিগ থেকে শিরোপা জিতে ফেরা রংপুর রাইডার্সের বিপিএলের শুরুটা হয়েছিল স্বপ্নের মতো। নিজেদের প্রথম আট ম্যাচের সবকটিতে জিতে সবার আগে প্লে-অফ নিশ্চিত করে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নরা। এমন অবস্থায় সবার জানতে চাওয়া এই রংপুরকে থামাবে কে? অথচ সেই রংপুরই যেন জিততেই ভুলে গেছে।
চট্টগ্রাম পর্বের শেষ ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে হারতে হয়েছিল তাদের। ঢাকায় ফিরে সেই রাজশাহীর বিপক্ষে আরও একবার হার। আগের ম্যাচে নুরুল হাসান সোহানরা জিততে পারেনি চিটাগং কিংসের বিপক্ষেও। নিজেদের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষেও হার দেখেছে রংপুর। টানা চার ম্যাচ হেরে এলিমিনেটর খেলার শঙ্কায় তারা। অথচ প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলা অনেকটাই নিশ্চিত ছিল তাদের।
চিটাগং শেষ দুই ম্যাচে জিতলে দুই থেকে পয়েন্ট টেবিলের তিনে নেমে যাবেন সোহানরা। রংপুরকে ৪৬ রানে হারিয়ে নিজেদের সেরা চারে যাওয়ার পথটা সুগম করেছে খুলনা। ১০ পয়েন্ট নিয়ে চারে থাকা খুলনা শেষ ম্যাচে ঢাকা ক্যাপিটালসকে হারাতে পারলেই প্লে-অফ নিশ্চিত হবে মেহেদী হাসান মিরাজদের। নেট রান রেটে পিছিয়ে থাকায় ১২ পয়েন্ট নিয়েও বাদ পড়বে রাজশাহী।
খুলনার জয়ের ভিতটা গড়ে দিয়েছেন নাইম শেখ। উদ্বোধনী জুটিতে মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ভালো শুরু করেছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। খুলনার অধিনায়ক ফেরার পর অ্যালেক্স রসও সুবিধা করতে পারেননি। যদিও নাইমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে ফিরতে হয় অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারকে। তবে নাইম পরবর্তীতে যা করেছেন তা দেখে হয়ত রস নিশ্চিত খুশিই হয়েছেন।
শুরুতে দেখেশুনে ব্যাটিং করলেও সময় বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত রান তুলেছেন নাইম। রংপুরের অগোছালো বোলিংয়ের বিপক্ষে চার-ছক্কায় ৩৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাঁহাতি ওপেনার সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন ৫৫ বলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ওপর ঝড় তুলে। নাইম শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন ১১১ রানে। ক্যামিও ইনিংসে ২২০ রানের পুঁজি পেতে অবদান রাখেন ১৪ বলে ২৯ রান করা মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।
২২১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে রংপুর। পাওয়ার প্লে শেষের আগেই সাজঘরে ফেরেন তৌফিক খান তুষার ও সাইফ হাসান। তাদের দুজনের ব্যর্থতায় পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪৫ রান তোলে রংপুর। সেখান থেকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছিলেন ইফতিখার আহমেদ ও সৌম্য সরকার।
যদিও তাদের দুজনের জুটি বড় হতে দেননি মুশফিক হাসান। ডানহাতি পেসারের স্লোয়ার ডেলিভারিতে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ রান করা ইফতিখার। পরবর্তীতে শেখ মেহেদীও দ্রুত রান তুলেছেন। ১৪ বলে রান করে ফিরেছেন মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে এক্সট্রা কভারের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টায়। একই ওভারে আউট হয়েছেন অধিনায়ক সোহানও।
একটু পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সৌম্য। বাঁহাতি ওপেনার শেষ ওভারে ফিরেছেন ৭৪ রানের ইনিংস খেলে। বাকিরা কেউ সঙ্গ দিতে না পারায় সৌম্য ওমন ইনিংস কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। খুলনার হয়ে বল হাতে আলো ছড়িয়ে ২৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন চোট কাটিয়ে বিপিএল দিয়ে মাঠের ক্রিকেটে ফেরা মুশফিক হাসান। এ ছাড়া নাওয়াজ দুটি উইকেট নিয়েছেন।