হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলন করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের ঘটনা দায়সারা বলে তারা এ মামলাও প্রত্যাখ্যান করে।
বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এ সংবাদ সম্মেলন করেন।
এর আগে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. মুহাম্মদ মুহসিন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে মামলা করেন।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তিনজনের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের মেসে হামলা হয়েছে। তারা হলো- বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন, বরিশাল পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মানিক এবং মামুন নামের এক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, স্থানীয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতাও হামলায় জড়িত। হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়সারা মামলা করে আন্দোলন দমাতে চাইছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব অভিযোগ করেন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুজয় বিশ্বাস শুভ।
তিনি বলেন, রূপাতলীর মেসে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আমরা আন্দোলন করায় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল তারা মামলা করবে। কিন্তু তারা একটি দায়সারা মামলা করেছেন। মামলায় কারও নাম উল্লেখ করেননি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার জন্য অবরোধ স্থগিত করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মামলায় নাম সংযুক্ত করা না হলে নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে। আহত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চিনতে পারা হামলাকারীদের নাম জানিয়েছে। লিখিত আকারে নাম দিয়েছে প্রশাসনের হাতে। তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেটি মামলায় যুক্ত করেনি।
তিনি বলেন, মামলায় তারা উল্লেখ করেছেন- মারধর করে জখম করা হয়েছে। মূলত মারধর না, শিক্ষার্থীদের হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়া ৪৬ জন শিক্ষার্থীর মানিব্যাগ, মোবাইল ও ল্যাপটপ ছিনতাই করেছে সন্ত্রাসীরা।
কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম বলেন, অজ্ঞাতপরিচয়দের আসামি করে মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আমরা তদন্ত করে দেখব, সেই রাতে হামলাকারী কারা ছিল। তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি মডেল থানায় দায়েরকৃত মামলা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস জানান, মামলায় অজ্ঞাতপরিচয়ের শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করছে। এ সময় হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের আহ্বান জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, ১৬ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিআরটিসি বাস কন্ডাক্টরের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জেরে এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাত ও অপর একজন ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করে। ঘটনার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ শেষে আবাসস্থলে ফিরে যান। ১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন শিক্ষার্থীদের মেসে গিয়ে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
এতে ১১ শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলার পরপরই রাত আড়াইটার দিকে সড়কে কাঠ পুড়িয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা; যা উপাচার্যের আশ্বাসে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ ১৪ ঘণ্টা পর তুলে নেয় ১৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল সোয়া ৪টায়।