নওগাঁর মান্দায় প্রতিবন্ধী এক শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনায় অবশেষে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অভিযান চালিয়ে উপজেলার নুরুল্লাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনায় ওই শিশুটির বাবা বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতেই মান্দা থানায় মামলা দায়ের করেন। গত ৬ জানুয়ারি উপজেলার কাঁশোপাড়া ইউনিয়নের একটি গ্রামে ধর্ষণের এ ঘটনা ঘটে।
তবে এ মামলায় ধর্ষণের ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়াসহ সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে দেওয়া মাতবরদের আসামি করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তারা মনে করেন, অপরাধীদের বাঁচানোর কৌশল পুলিশের।
এদিকে, বুধবার দুপুরে নওগাঁ আইন ও সালিস কেন্দ্রের চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ দলের প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম শহীদ বলেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেন, ধর্ষণের ঘটনা সালিসযোগ্য বিষয় নয়। যেসব ব্যক্তিরা ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সালিস করেছেন তারাও একই অপরাধে অপরাধী। এদেরও আইনের আওতায় এনে বিচার করা দরকার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জানুয়ারি প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ৯ জানুয়ারি রাতে গ্রামের আনোয়ারা বিবির বাড়িতে সালিসের আয়োজন করেন স্থানীয় মাতবরেরা। সালিসে ধর্ষণের কথা স্বীকার করায় অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম সুটকাকে (৪৫) জুতাপেটাসহ আট হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে পুলিশ নড়েচড়ে বসে। এদিন সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত সুটকাকে নুরুল্লাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শিশুটিকে কোনো হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে নেওয়া হয়নি। গ্রাম্য একজন চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো হয়েছে। পরে সালিসের মাধ্যমে মাত্র ৮ হাজার টাকায় এটি ধামাচাপা দেওয়া হয়। ওইসব মাতবরকে আসামি করা হয়নি কেন- এ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে একজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। ভিকটিমের ডাক্তারি পরীক্ষা নওগাঁ হাসপাতালে সম্পন্নসহ আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে সালিসের আয়োজক মাতবরদের কেন আসামি করা হয়নি- জানতে চাইলে ওসি বলেন, শিশুটির বাবা শুধু একজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাই অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি।