জোরে শোরেই চলছিল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজ। তবে নির্মাণাধীন এ এলাকায় মাটি খুঁড়তে গিয়ে এখন পর্যন্ত মিলেছে চারটি বোমা। ৯ ডিসেম্বর প্রথম বোমাটি পাওয়ার পর থেকেই সর্তকতার সঙ্গে চলছে মাটি খোঁড়ার কাজ। জেনারেল পারপাস (জিপি) মডেলের আরও বোমা থাকার শঙ্কায় নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকা স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সহায়তা।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণাধীন এলাকায় পাওয়া বোমাগুলোর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। আবার এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের হতে পারে বলেও মনে করেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) নাঈম হাসান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বোমাগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হতে পারে। তবে তখন তো এই এলাকায় বিমানবন্দর বা মানুষের বসতি ছিল না। তবে এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ক্যান্টেনমেন্টে একটি বিমানবাহিনীর একটি বেজ ও এয়ারপোর্ট ছিল। তখনকার বোমাও হতে পারে এগুলো।’
বিমানবন্দরে মাটি খোঁড়ার সময় চারটি বোমার অস্তিত্ব টের পাওয়ার পর পরই দ্রুত উদ্ধার করেছে বিমান বাহিনী। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বোমাগুলো প্রতিটি ২৫০ কেজি ওজনের ছিল, যা জেনারেল পারপাস (জিপি) বোমা। প্রতিবারই বোমার উপস্থিতি নিশ্চিত হলে ঘটনাস্থলে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুর প্রশিক্ষিত বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমা নিষ্ক্রিয় করেছে। আর বোমাগুলো উদ্ধার করে নিয়ে নিরাপদ স্থানে ধ্বংস করা হয়েছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, বোমা বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাওয়া বোমাগুলো ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভূমিতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
বিমানগুলো উদ্ধার হওয়ার পর নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। বোমাগুলো কীভাবে মাটির এত নিচে গেলো? যদি কোনও কারণে মাটির নিচে আরও বোমা থাকে সেখানেই তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ শেষ হয় তাহলে কী হবে?
এসব প্রশ্নের জবাবে বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) নাঈম হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কুর্মিটোলা এলাকাটা এক সময় জলাভূমি ছিলও। বিমানবন্দরে যে জায়গায় নির্মাণ কাজ চলছে সেটা তো কিছুদিন আগেও জলাশয় ছিল। ফলে নরম কাদামাটির নিচে সহজেই ভারি বোমাগুলো তলিয়ে গেছে। তবে বোমাগুলো নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পুরোনা বোমাগুলো এখনকার বোমার মতো শক্তিশালী নয়। এত বছরেও বোমাগুলোর বিস্ফোরণ ঘটেনি। মাটির নিচে আরও বোমা থাকলেও তার কার্যকারিতা হারাবে। এখনও বিশ্বের অনেক দেশেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার বোমা উদ্ধার হচ্ছে। ফলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।’
৯ ডিসেম্বর বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন টার্মিনাল থেকে প্রথম বোমা উদ্ধার হয়। এরপর ১৪, ১৯ ও ২৮ ডিসেম্বর আরও তিনটি বোমা উদ্ধার হয়। আরও বোমা থাকার শঙ্কায় নির্মাণাধীন এলাকা পুরোটা স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে বলে বলে জানান তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) একেএম মাকসুদুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখানে বোমা থাকতে পারে এটা আমাদের ধারণাই ছিল না। বোমা উদ্ধারের পর গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। বিমানবাহিনীর সহায়তায় বোমা উদ্ধার হচ্ছে। পুরো এলাকায় সাবধানতার সঙ্গে কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও দুর্ঘটনার শঙ্কা নেই।’
কাদা-মাটির নিচে বোমাগুলো ধীরে ধীরে কার্যাকারিতা হারাচ্ছে বলেও মত দেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ উল আহসান। তিনি বলেন, ‘মাটির নিচে থেকে জং ধরে ধরে বোমাগুলো এক সময় নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে মাটির নিচে থেকে গেলোও কোনও সমস্যা নেই। তারপরও স্ক্রিনিংয়ের কাজ করছে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষিত বোম্ব ডিসপোজাল দল। আরও বোমা পাওয়া গেলে তারা উদ্ধার করবে।’