নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলা সদরের কাছারি জামে মসজিদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে একটি শহিদ মিনার।
এ শহিদ মিনারের পরিবর্তে আরেকটি শহিদ মিনার তৈরি হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবত অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে এ শহীদ মিনারটি। এতে একদিকে যেমন শহিদ মিনারের অবমাননা হচ্ছে অন্যদিকে মসজিদের ভেতরে পড়ে যাওয়ার মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতেও সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৬৮ সালে ভাষাসৈনিক আলহাজ ইউনুছ আলী মণ্ডল, সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আইয়ুব আলী, প্রয়াত প্রিন্সিপাল সিরাজুল ইসলাম, প্রয়াত মাহফুজুল হক, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আ. হেলিম ও মুঞ্জুরুল হকসহ স্থানীয় রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা উপজেলা সদরের জামতলায় বর্তমান ইউনিয়ন ভূমি অফিস সংলগ্ন সরকারি জায়গায় এ শহিদ মিনারটি নির্মাণ করেন।
পরে ১৯৭৪ সালে ওই শহিদ মিনারটি সংস্কার করে আরও বড় করা হয়। তখন থেকে উপজেলার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের লোকজন, বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, বেসরকারি সংস্থা, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এ শহিদ মিনারেই ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেন।
এ সময় ওই শহিদ মিনারের পাশেই স্থানীয় লোকজন একটি নামাজখানা তৈরি করেন। ধীরে ধীরে নামাজের জায়গা বড় হয়ে শহিদ মিনারকে ঘিরে নির্মিত হয় একটি বড় মসজিদ।
এতে শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বিড়ম্বনার সৃষ্টি হলে ২০০০ সালে সরকারিভাবে উপজেলা সদরের স্টেশন রোড এলাকায় আরও একটি শহিদ মিনার স্থাপন করা হয়।
এরপর থেকে পুরনো শহিদ মিনারে ফুল দেওয়া বন্ধ হয়ে যায় ও শহিদমিনারটি অযত্ন-অবহেলায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে।
এ ব্যাপারে ভাষাসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ ইউনুছ আলী মণ্ডল বলেন, শহিদদের স্মরণে নির্মিত শহিদ মিনারে ফুল না দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, এখানে শহিদ মিনারটির প্রয়োজন না থাকলে পরিত্যক্ত অবস্থায় না ফেলে রেখে এখান থেকে সরিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিলে এর মর্যাদা রক্ষা পাবে।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম ফয়জুর সিরাজ জুয়েল জানান, বর্তমানে এই শহিদ মিনারটি পরিত্যক্ত ঘোষিত না হলেও দীর্ঘদিন ধরে এখানে ফুল দেওয়া হয় না। তাই মসজিদের মুসল্লিদের অসুবিধার কথা চিন্তা করে ইতোপূর্বে শহিদমিনারটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করা হয়েছিল।
মসজিদের মুসল্লি ও এলাকার বাসিন্দা শহীদ মিয়া এবং ডা. আলীম উদ্দিন জানান, স্থানীয় লোকজন স্বাধীনতার পূর্ব থেকে এ মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। বর্তমানে মুসল্লি বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদ সম্প্রসারিত করা হয়েছে। এতে শহিদ মিনারটি মসজিদের বারান্দার ভিতরে পড়ে গেছে। তাই শহিদ মিনারটি স্থানান্তরিত করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে কুলসুম জানান, শহিদ মিনারটির বর্তমান অবস্থান মসজিদের বারান্দায় হওয়ায় এতে ফুল দেওয়া হয় না। মসজিদ এবং শহিদ মিনার বিষয় দুটি স্পর্শকাতর হওয়ায় ওপর মহলকে জানিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।