দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ার পর জমে উঠেছে ভোলা-৩ (তজুমদ্দিন-লালমোহন) আসনের নির্বাচনী প্রচারণা। এ আসনে এবার লড়াই হবে বাংলাদেশ আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন (নৌকা) এবং আ.লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিনের (ঈগল) মধ্যে। নৌকা-ঈগল ছাড়াও আসনটিতে আরও দুইজন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন জাতীয় পার্টির অপরজন বাংলাদেশ কংগ্রেসের। কিন্তু তাদের চিনেন না সংশ্লিষ্ট আসনের অধিকাংশ ভোটারসহ সাধারণ মানুষ। তাই ভোটারদের মধ্যে আলোচনায় এখন নৌকা-ঈগলের লড়াই।
ইতোমধ্যেই হেভিওয়েট দুই প্রার্থী সমর্থকদের নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারে। সভা-মিছিল করে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা।
সাধারণ ভোটরদের ধারণা- এ দুই প্রার্থীর মধ্যে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। সাবেক এমপি মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিভিন্ন এলাকায় সভা ও উঠান বৈঠক করছেন। অপরদিকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, তার নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। তিনি নৌকা প্রতীক পাওয়ার পর বিশাল মিছিল বের করে (লালমোহন-তজুমদ্দিন) দুই উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন বলেন, দেশের মানুষ এখন নৌকা ছাড়া অন্য কোথাও ভোট দিতে চায় না। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নৌকা দিয়েছেন, জনগণ আমার পাশে আছেন, আমি শতভাগ নিশ্চিত আমিই জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।
এইদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন বিভিন্ন ইউনিয়নে গণসংযোগ পথসভা করেছেন ঈগল মার্কার। তিনিও বিপুল ভোটে জয়ী হবেন বলে আশাবাদী।
বিভিন্ন এলাকার সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন স্থানীয় নেতাকর্মীদের তেমন একটা মূল্যায়ন না করাতে। হাইব্রিড আওয়ামী লীগদের আগলে রাখা করেন এবং এলাকায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড দরে রাখতে না পাড়ার কারণে তারা এবারও আস্তা রাখতে চায় না শাওনের (নৌকার) উপর।
তবে “হাইব্রিড,, নেতাকর্মীদের কাছে নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে নেই স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন।
তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ মনে করেন দুই প্রার্থীর মধ্যে এবার হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন বলেন, আমি ২০০৮ সালে আসনটিতে আ.লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। তবে নির্বাচিত হওয়ার দেড় বছরের মাথায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পাঁচ বছর পূর্ণ না হওয়ার অজুহাত দেখিকে বিএনপির প্রার্থী মেজর হাফিজ সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট করেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট আমার প্রার্থিতা বাতিল করে রুল জারি করলে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আসনটি শূন্য হয়ে যায়। আমি দেড় বছর এমপি থাকাকালীন যতুটুকু সময় পেয়েছি উন্নয়ন করার চেষ্টা করেছি। লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষের মধ্যে ভ্রাতিত্বের বন্ধন তৈরি করেছি। এলাকার মাদক কারবার ও সেবন নিয়ন্ত্রণ করেছি। মেঘনা নদীর ডাকাতি নিয়ন্ত্রণ করেছি।
তাই লালমোহন-তজুমদ্দিনের মানুষ আমাকে ভালোবাসেন। আমি আশা করি এবার বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব ইনশাআল্লাহ।
অন্যদিকে ২০১০ সালের ২৪ এপ্রিল উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহাম্মদকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ২০১৮ সালে একাদ্বশ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন।
নুরুন্নবী চোধুরী শাওন বলেন, গত ১৩ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালীন শেখ হাসিনার নির্দেশে অনেক রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করেছি।
মেঘনা নদীর হাত থেকে তজুমদ্দিনকে রক্ষা করতে ব্লক নির্মাণ করেছি। আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি, লালমোহন-তজুমদ্দিন তথা ভোলা-৩ আসন হলো নৌকার ঘাঁটি। এবার দুই থানার জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করবে।
উল্লেখ্য, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-৩ (তজুমদ্দিন-লালমোহন) আসনে চারজন প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন।
তারা হলেন- বাংলাদেশ আ.লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন (নৌকা), আ.লীগের সাবেক সংসদ সদস্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) জসিম উদ্দিন (ঈগল)।
এর বাইরে অন্য দু’জন প্রার্থী ভোলা জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক মাও. কামাল উদ্দিন (লাঙ্গল) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোঃ আলমগীর (ডাব)।
লাঙ্গলের প্রার্থী ও ডাবের প্রার্থীকে কেউ এখনো তেমন চেনেন না। তাদের প্রচারণার ও তেমন একটা নেই ।