বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার খ. মহিদ উদ্দিন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘যে অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, পুলিশ হেফাজতে দুইদিন জিজ্ঞাসাবাদ তার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
মুরাদ হোসেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর ক্যাম্পাসের দিবা শাখার গণিতের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক। ২০১০ সাল থেকে তিনি এখানে পড়াচ্ছেন। পাশাপাশি আজিমপুর এলাকায় নিজের ফ্ল্যাটে কোচিং সেন্টার খুলে ছাত্রী পড়াতেন।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন বলেন, একজন অভিভাবক গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন যে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর দিবা শাখার গণিতের এক সিনিয়র শিক্ষক মুরাদ হোসেন তাদের কন্যা সন্তানের শ্লীলতাহানি করেছেন। অভিযোগে জানান, ভিকটিম ৮ম শ্রেণির ছাত্রী, বয়স ১৩ বছর। সে ৭ম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় গত বছর মার্চ মাসে শিক্ষকের নিজের বাসায় স্থাপিত কোচিং সেন্টারে প্রথম শ্লীলতাহানির শিকার হয়। তখন ভয়ে কাইকে জানায় নাই। গত নভেম্বর মাসে আবারও চরমভাবে শ্লীলতাহানির শিকার হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বিষয়টি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষকে অবগত করা হয়। চলতি মাসের ৩ তারিখ কলেজের প্রিন্সিপাল অভিভাকদের সঙ্গে একটি সভার আয়োজন করে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। সভায় ভিকটিম ও তাদের অভিভাকদের কথা শুনা হয়। সেখানে জানা যায়, আরও একাধিক ভিকটিম এই শিক্ষকের কাছে শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছে। পরবর্তীতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত শিক্ষক ভিকটিমদের বাসায় গিয়ে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য অনুরোধ জানায়।
তিনি বলেন, এঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের আজিমপুর শাখার সামনে ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অভিযুক্ত শিক্ষকের সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্দন হয়েছে। ভিকটিমের অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় একটি মামলা রুজু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে অভিযুক্ত শিক্ষক মুরাদ হোসেন সরকারকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার ব্যবহৃত ১টি মোবাইল ফোন, মেমোরি কার্ড ও ১টি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
জব্দকৃত আলামত পর্যালোচনা করে ভিকটিমসহ অন্যান্য ছাত্রীদের বেশ কিছু অডিও রেকর্ডিং ও কথোপকথনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা যাচাই-বাছাই অব্যাহত আছে।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার শিক্ষককে আদালতে পাঠালে বিচারক ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ভিকটিম ছাত্রী আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, এই মামলা তদন্ত শেষ করে দোষীকে যথোপযুক্ত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে। শুধু শিক্ষক নয়; ভবিষ্যতে যেকোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধে যেন জড়িত হওয়ার সাহস না দেখায়, সে ধরনের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নারী ও শিশুদের ব্যাপারে অত্যন্ত সংবেদনশীল। অবশ্যই প্রতিটা শিশু সন্তান তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে। আর এ ধরনের অপরাধ যেই করবে তাকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে বলে সব অভিভাবকদের আশ্বস্ত করেন ডিএমপির এই কর্মকর্তা।