দেশ থেকে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি ভারতের কারাগারে আছে কিনা অনুসন্ধান করে দেখবে গুম সংক্রান্ত কমিশন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের কারাগারে থাকা বাংলাদেশি বন্দীদের তালিকা চাইলে ১০৬৭ জনের দিয়েছে দেশটি। সেই তালিকায় দেশ থেকে গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা মিলিয়ে দেখছে কমিশন।
আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর গুলশানে গুম সংক্রান্ত কমিশনের অফিসে এক সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি (অব.) মইনুল ইসলাম চৌধুরী এই তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগারে বন্দী বাংলাদেশি নাগরিকদের তালিকা চাওয়া হয়েছিল। ভারত ১০৬৭ জনের একটি তালিকা দিয়েছে, সেটি গুম সংক্রান্ত কমিশন মিলিয়ে দেখছে, সেই তালিকায় গুম হওয়া কোনো ব্যক্তি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এই তালিকা ভারত আরও দেবে।’
এর আগে তিনি বলেন, ‘গত ২২ ডিসেম্বর ধামরাই থেকে গুম হওয়া মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ নামের এক ব্যক্তিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়েছে। এ বিষয়ে কমিশন অনুসন্ধান করছে।’
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপার ও বিজিবির সেক্টর কমান্ডারদের কাছে গত আগস্টের পর ভারত থেকে বাংলাদেশে পুশইন করা ব্যক্তিদের তালিকা চাওয়া হলে বাংলাদেশ পুলিশের পক্ষ হতে ১৪০ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। এই তথ্যের প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে কোনো গুমের শিকার ব্যক্তির নাম এখনো পাওয়া যায়নি।
কমিশনের সভাপতি বলেন, কমিশনে ১ হাজার ৭৫২টি অভিযোগ জমা পড়েছে, যার মধ্যে ১ হাজারটি অভিযোগ ও তার সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রের যাচাই-বাছাই প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনে ২৮০ জন অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় ৪৫ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। আবার গুমের শিকার হয়ে ফিরে না আসা ৩৩০ জন ব্যক্তির বর্তমান অবস্থা বা ভাগ্য সম্পর্কে অনুসন্ধান চলমান আছে।
কমিশনে দাখিল করা গুম সংক্রান্ত অভিযোগগুলোর মধ্যে ৭৪টি অভিযোগ তদন্ত ও নিষ্পত্তির জন্য আইজিপিকে দেওয়া হয়েছে।
মইনুল ইসলাম আরও জানান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে।
ঢাকা, বগুড়া, নারায়ণগঞ্জ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিএফআই, সিটিটিসি ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু গোপন বন্দিশালার সন্ধান পাওয়া মাত্রই পরিদর্শন করে অপরিবর্তিত রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন গুম কমিশনের সভাপতি।
কমিশন গঠনের কয়েক সপ্তাহের মাঝেই ডিজিএফআইয়ের জেআইসি (আয়নাঘর) এবং র্যাব হেডকোয়ার্টারের টিএফআই পরিদর্শন করে আলামত ধ্বংসের প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে বন্ধ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।