পাঁচ ব্যাংকে অফিসার (ক্যাশ) পদে এক হাজার ৫১১ জনকে নিয়োগ দিতে গত শনিবার যে পরীক্ষা হয়েছে সেখানে ভয়ংকর জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, এই পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি বিভাগ থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে ১১টি বুথে ৮৫ শতাংশ ‘উত্তর সমাধান’ দিয়েছে জালিয়াতচক্র। এ জন্য একজন চাকরিপ্রার্থীর সঙ্গে পাঁচ থেকে ১৫ লাখ টাকার চুক্তি করে তারা।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা দেওয়ার চুক্তি করা হলেও প্রাথমিকভাবে অন্তত ৬০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য মিলেছে। ২০০ চাকরিপ্রার্থী ‘উত্তর সমাধান’ কিনেছেন বলেও প্রমাণ পেয়েছে ডিবি। আরো দুই হাজার চাকরিপ্রার্থী এই চুক্তি করেছেন বলে খোঁজ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটির আইটি টেকনিশিয়ানসহ সরকারি ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা মিলে এই জালিয়াতচক্র গড়ে উঠেছে। গত শনিবার থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। গতকাল বাড্ডা থানায় ২৮ জনের নাম উল্লেখসহ অচেনা আরো ২৫ জনের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
ডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, একই সিন্ডিকেট পর পর ব্যাংকের চারটি নিয়োগ পরীক্ষায় একইভাবে জোচ্চুরি করেছে। সম্প্রতি পরীক্ষা বাতিলের জন্য চাকরিপ্রার্থীদের মানববন্ধনের দাবির সত্যতা পেয়ে গতকাল ডিবির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে তদন্তের ব্যাপারে জানানো হয়েছে।
এদিকে পরীক্ষার্থীদের অভিযোগকে গুজব মনে করে শুরুতে গুরুত্ব না দিলেও ডিবির অভিযানের পর নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ঘটনায় আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন ইউনিট। গতকাল বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। গতকাল দুপুরেই গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে তদন্তের সার্বিক বিষয় তুলে ধরে ডিবির তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তার ও তদন্তের ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হয়। গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন প্রশ্ন ফাঁসের মূল হোতা আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটির আইসিটি টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল (২৬), জনতা ব্যাংকের গুলশান শাখার কর্মকর্তা শামসুল হক শ্যামল (৩৪), রূপালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার জানে আলম মিলন (৩০), পূবালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান মিলন (৩৮) ও পরীক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম স্বপন। তাঁদের কাছ থেকে কিছু আলামতও জব্দ করেন তদন্তকারীরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন ইউনিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির কাছে ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যাখ্যা পাওয়ার পরই পরীক্ষা বাতিল করা না-করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
পরীক্ষার্থীদের কাছে ১৫ লাখ টাকায় প্রশ্নপত্র বিক্রি নিয়ে মিডিয়ায় যে খবর বের হয়েছে, সেই বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খতিয়ে দেখা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের তথ্য আমরা মিডিয়ার মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে তা প্রকাশ করা হয়েছে। এর বাইরে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তাই গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নিয়েই আমাদের এগোতে হবে। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের রিমান্ডে নিলে হয়তো প্রকৃত ঘটনা জানা সম্ভব হবে। এটা তো আমরা পারব না। গোয়েন্দা সংস্থাই এটা করতে পারবে।’