মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় নিহত ব্যবসায়ী লক্ষণ পাল (৪০) কে হত্যার জন্য ৫ জন খুনিকে ৪ লাখ টাকায় ভাড়া করা হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে রাজনগর থানা পুলিশ। রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসিমের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ ) গভীর রাতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত ছুরি (চাকু) ও একটি সিএনজি অটোরিকশা জব্দ করা হয়।
আটককৃত আসামিরা হলেন- রাজনগর উপজেলার আমিরপুর গ্রামের মৃত জসিম মিয়ার ছেলে রিয়াদ মিয়া (২৪), জামাল মিয়ার ছেলে জয়নাল আবেদীন (২৮), উত্তর ঘড়গাঁও গ্রামের রনজিত দেবের ছেলে রবেন্দ্র দেব (৩৬)। এদিকে গত ১৩ মার্চ কালের কণ্ঠের অনলাইনে ‘পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে খুন হলেন ব্যবসায়ী লক্ষণ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
পুলিশ জানায়, ব্যবসায়ী নিহত লক্ষণ পাল ব্যবসার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য প্রতি শুক্রবার রাজনগর এলাকায় আজাদের বাজার, মোকামবাজার ও টেংরা বাজার টাকা আদায়ের জন্য আসেন। আসামি রবেন্দ্র দেবের সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে বেশ কিছুদিন পূর্বে থেকে বিরোধ ছিল। তারই জের ধরে এলাকার বখাটে ৫ জন আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং আরো কতিপয় আসামিদের যোগসাজশে পরিকল্পনা করে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার এবং তার সঙ্গে থাকা টাকার প্রলোভন দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার আগের শুক্রবারেও নিহত লক্ষণ পালকে খুন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও সফল হতে পারেনি। ১২ মার্চ লক্ষণ পাল রাত ১০টার সময় আজাদের বাজারে আসলে আসামিরা রবেন্দ্র দেব সুকৌশলে হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ৫ জন আসামিদের দেখিয়ে দেন। আসামিরা প্রথমে তিনজন সিএনজি নিয়ে আজাদের বাজারে আসেন। এই সময় ব্যবসায়ী লক্ষণ সিএনজি অটোরিকশার জন্য অপেক্ষারত ছিলেন। তিনি উক্ত সিএনজি অটোরিকশায় উঠেন। পথিমধ্যে কমলারানীর দীঘির আগে আরো দুজন আসামিদের গাড়িতে উঠানো হয়। কমলা দীঘির পশ্চিম পাশে মাঝামাঝি রাস্তায় গেলে আসামিরা তাকে চেপে ধরেন এবং টাকা, মালামাল নেওয়ার চেষ্টাকালে বাঁধা দেওয়ায় আসামিরা গলায় চাপ দিয়ে ধরে এবং উরুতে ছুরি (চাকু) দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। সিএনজি অটোরিকশা চলতি অবস্থায় লক্ষণ পাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। লক্ষণ পালের সঙ্গে থাকা নগদ ৫৫ হাজার টাকা ও ব্যবহৃত একটি বাটন ওয়ালা সিম্পনী মোবাইল ফোন আসামিরা ছিনিয়ে নেয়। পার্শীপাড়া নামক নিরাপদ স্থানে রাস্তার ওপর আসামিরা লক্ষণ পালের মৃত দেহ রাস্তার ওপরে ফেলে দেয়। আসামিরা কমলগঞ্জ থানা হয়ে মৌলভীবাজার চলে যায়।
এ বিষয়ে রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল হাসিম বুধবার সন্ধ্যায় ৬টা ৫৩ মিনিটে কালের কণ্ঠের এ প্রতিবেদককে মুঠোফোনে বলেন, আজ দুপুরে আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় পাওনা টাকা আদায় করতে গিয়ে লক্ষণ পাল (৪০) নামক এক ব্যবসায়ী খুন হন। ১২ মার্চ শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের পার্শ্বিপাড়া এলাকায় রাজনগর-কর্ণিগ্রাম সড়ক থেকে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ১৩ মার্চ নিহত লক্ষণ পালের ভাই স্বপন পাল বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।