লকডাউন তুলে নেওয়ার পর থেকে ক্রমেই করোনাভীতি কমে যাচ্ছে সবার। অফিস, আদালত, দোকানপাট চলছে, যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে অনেক দিন থেকে। যদিও করোনা সংক্রমণ থেমে নেই, তবু জীবন-জীবিকার তাগিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু চলছে আগের মতোই। করোনায় অন্য সব কিছুর মতো দুয়ার বন্ধ ছিল কাজি অফিস, কনভেনশন হল, ওয়েডিং প্ল্যানার্স, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি ও ঘটকবাড়ির মতো প্রতিষ্ঠানের। বিয়ে থেমে না থাকলেও ঘটছিল অনেকটা আড়ালে-আবডালে, সংক্ষিপ্ত পরিসরে। তবে এখন পরিস্থিতির বদল ঘটেছে অনেকটাই। বিয়েবাড়িতে সানাই বাজতে শুরু করেছে। বর ও কনেকে ঘিরে আত্মীয়দের মধ্যে চলছে হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাস। তবে বিয়ের এমন জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে সবাই অংশ নিচ্ছেন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই।
ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান
বিয়ের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এলিগেন্ট ইভেন্ট অ্যান্ড সলিউশনের সিইও রাজিয়া হক কনক বলেন, ‘এখন বাড়িতেই বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন হচ্ছে বেশি। বাড়ির ছাদ কিংবা খোলা প্রাঙ্গণকেই সাজিয়ে নেওয়া হচ্ছে উত্সবের মতো করে। ঘরের লোকরাই এমন আয়োজনে নেচে-গেয়ে আনন্দ করছেন। ফলে সেখানে আর করোনার বাড়তি ভয় থাকছে না। আমরাও ক্লায়েন্টদের ঘরোয়া আয়োজন করতেই বেশি উত্সাহিত করছি। অতিথি অ্যাপায়নের জন্য কনভেনশনগুলোকে সাজেস্ট করি। নিরাপত্তার জন্য আমরা সব কর্মীরা ইভেন্টের আগে করোনা পরীক্ষা করিয়ে তবেই বিয়েতে অংশ নিই। এছাড়া বিয়ের আয়োজনে যেন স্বাস্থ্যবিধিগুলো ঠিকমতো পালন করা হয় সেদিকে নজর রাখি। আমার ইভেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে করোনাকালের বিয়েতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের সাপোর্টই দেওয়া হয়।’
কনভেনশন হল
করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও আবারও খুলেছে কনভেনশন হলগুলোর দ্বার। অতিথিদের নিরাপত্তায় হলগুলো করোনাভাইরাসসহ সব ধরনের প্রাণঘাতী জীবাণু থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করছে তারা। ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার [আইসিসিবি] ডেপুটি ব্র্যান্ড ম্যানেজার মেহেদী হাসান বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের সব কর্মীই মাস্ক ব্যবহার করে সার্ভিস দিয়ে থাকেন। যাঁরা ফুড প্রসেসিংয়ের যুক্ত তাঁরা অ্যাপ্রনসহ হ্যান্ড গ্লাভস পরিধান করেন। অতিথিদের যাতে কোনো কিছু স্পর্শ করতে না হয় এ জন্য প্রতিটি দরজায় আমাদের নিজস্ব কর্মী থাকেন। অতিথিদের পা ডিজইনফেকশন করা, হাত ধোয়ার জন্য সাবান পানির ব্যবস্থা, ডিজইনফেকশনাল চেম্বারের মধ্য
দিয়ে হলে প্রবেশ করতে হয়। আমরা এখানে অতিথিদের জন্য মাস্ক সরবরাহ করি। এখানে থাকার সময় যাতে তাঁরা মাস্ক পরিধান করেন সে বিষয়েও তাঁদের নানাভাবে উত্সাহিত করা হয়। আমাদের হলে টেবিলসংখ্যাসহ টেবিলে চেয়ারের সংখ্যাও কমিয়ে এনেছি। অতিথি সংখ্যা বেশি হলে আমরা তাদের ভাগ করে দুই থেকে তিনবার অ্যাপায়নের ব্যবস্থা করছি সংস্পর্শ কমিয়ে আনার জন্য। মোট কথা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যতটুকু করা সম্ভব তার সবই করছি। এখন মানুষও অনেক সচেতন। তাঁরাও আমাদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন।’
সাজের কথা
বর-কনের বিয়ের আগে রূপচর্চা খুব জরুরি। বিশেষ করে কনের দিকে বিয়েতে নজর থাকে সবার। এ জন্য তাঁর সাজটাও হওয়া চাই সবার চেয়ে আলাদা। করোনার জন্য পার্লারগুলোও বন্ধ ছিল কয়েক মাস। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলেছে পার্লারের দুয়ার। বর-কনেও আসছেন পার্লারে সাজতে। রেড বিউটি পার্লার স্যালনের রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন বললেন, ‘করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেবা দিচ্ছি আমরা। এখানে কনেসহ সাধারণ সেবাগ্রহীতাদের বেলায়ও একই স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হয়। করোনায় মাস্ক পরে থাকতে হয় বলে এখন চোখের সাজের ট্রেন্ড। কিন্তু বিয়ের কনের শুধু চোখ সাজানোর সুযোগ নেই। তাঁকে এখন ব্রাইডাল মেকআপেই সাজাচ্ছি আমরা। তবে কনের সঙ্গীদের সঙ্গে সঙ্গে কনের চোখের সাজের দিকেও আলাদা নজর দিচ্ছি। যাতে যে সময়টায় মাস্ক পরবে তখন যেন চোখের সাজের ব্যাপারটি নজরে আসে।’
নিমন্ত্রণপত্র
তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে চাইলেই হাজার মাইল দূরের মানুষের সঙ্গে কথা বলা যায়। করোনায় যেহেতু বাইরে যাওয়া মানা তাই মুঠোফোনে কথা বলে, ভিডিওকলে দাওয়াতের আনুষ্ঠানিকতা সারছেন অনেকেই। কিন্তু বিয়ের দাওয়াত বলে কথা। নিমন্ত্রণপত্র না পেলে কী চলে। আইডিয়াল প্রডাক্টসের মতো আরো অনেক প্রতিষ্ঠান এখন বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র করে দিচ্ছেন। এগুলোয় চাইলে নিজেদের ছবি, মজার দু-এক লাইন ছন্দ অথবা অতিথিদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাটিও স্মরণ করিয়ে দিতে পারেন। হাতে যদি সময় থাকে আর অতিথি সংখ্যা কম হয়, তাহলে ভিন্ন উপায়েও নিমন্ত্রণপত্র বানাতে পারেন। কাগজ-কলম-কালি-কাঁচি নিয়ে বসে পড়ুন। হাতে বানানো নিমন্ত্রণপত্রের আবেদন সব সময়ই আলাদা।
কিছু টিপস
১। বিয়েবাড়ি বলেই অহেতুক জটলা পাকানো থেকে দূরে থাকুন।
২। সব সময় মাস্ক পরিধান করুন।
৩। বিয়েবাড়ি অথবা কনভেনশন সেন্টারে প্রবেশের আগে হাত ধুয়ে নিন। জুতা জীবাণুনাশক পানিতে ভিজিয়ে পাপোশে মুছে নিন।
৪। অধিক লোক সমাগমস্থল এড়িয়ে চলুন।
৫। আনন্দের আতিশয্যে স্বাস্থ্যবিধির কথা ভুলে যাবেন না।
৬। প্রয়োজন ছাড়া মাস্ক খুলবেন না।
৭। ছবি তোলার পর আবার মাস্ক পরিধান করুন।