বিষাক্ত সাপের কামড়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়। অথচ একটু সহজ কিছু উপায় অবলম্বন করলে সর্পদংশন থেকে মানুষের মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। বুধবার (২১ এপ্রিল) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
ভারতের কর্নাটক রাজ্যের রত্নাপুরী গ্রামের এক ক্ষেত মজুর টুকারাম রাও। বর্ষায় আগাছায় তার ক্ষেতের মাটি ঢাকা পড়ে। রাতে ক্ষেতের মধ্য দিয়ে হেঁটে যেতে হয় পাম্প চালু করার জন্য। আবার পানির পাইপ ঠিকমত কাজ না করলে হাত দিয়ে পাইপ টেনে ধরে মেরামতও করতে হয় তাদের।
টুকারাম রাও বলেন, তারমত অনেক কৃষক ও মজুররা খালি পায়ে চলাফেরা করেন। কিন্তু বর্ষার সময় আগাছার মধ্যে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের চলাচল বেশি থাকে। ভারত আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বিষাক্ত এই সাপের ছোবলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হয়। রাতের বেলায় এ সাপ বেশি সক্রিয় হয়। ছোবল মারার আগে অনেকক্ষণ লুকিয়ে থাকে। তারপর হঠাৎ করেই ভয়ানকভাবে ছোবল মারে রাসেলস ভাইপার। ভারতের সর্পদংশনে মৃত্যুর ৪৩ শতাংশই মৃত্যু হয় এই সাপের ছোবলে। শ্রীলঙ্কাতে এই হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশেও যেসকল সাপ দেখা যায় তার মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত রাসেলস ভাইপার। ঘাস বা আগাছার মধ্য দিয়ে খুবই ধীর গতিতে চলে। গায়ের সবুজ ও বাদামী চাকা চাকা দাগের জন্য দিনের বেলায় ঘাস বা আগাছার রংয়ের সঙ্গে মিশে থাকে তারা। তাই তাদের দেখতে পাওয়া যায় না এবং রাতের বেলায় তাদের দেখতে পাওয়া আরও কঠিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে অন্তত ৫ লাখ ৮০ হাজার মানুষ সর্পদংশনের শিকার হয়। এতে অন্তত মারা যায় ৬ হাজার মানুষ। সাপের কামড়ের পর বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর পরবর্তী জীবনেও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। দংশনের জন্য বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জীবন-জীবিকা।
টুকারাম রাও বলেছেন, প্রতি বছর প্রায় চার লাখ সাপে কাটা মানুষ কোনো না কোনো প্রকার পঙ্গুত্বের শিকার হয়। অঙ্গের কোষকলা শুকিয়ে মরে গেলে সেই অঙ্গ কেটে ফেলতে হয়। তাছাড়া হয়তো সেই অঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়। কেউ কেউ সাপের কামড়ের জন্য অন্ধও হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনে লিভারপুল স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিনের সাপের বিষ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ লরা-ওয়ানা আলবুলেস্কু।
চিকিৎসা :
সাপে ছোবল মারলে জীবন বাঁচাতে চিকিৎসার প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ‘অ্যান্টিভেনম’ বা বিষের প্রতিকার ঔষধ তৈরি খুব কঠিন নয়। যে সাপের বিষ কাটানো হবে সেই সাপের শরীর থেকে বিষ সংগ্রহ করে খুবই অল্প মাত্রা ঘোড়ার শরীরে প্রবেশ করতে হবে ইনজেকশনের মাধ্যমে। এতে ঘোরার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এবং সেই অ্যান্টিবডিকে বিশুদ্ধ করে সাপে কাটা মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে সাপের বিষয় নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হবে। অ্যান্টিভেনম ঠিকমতো কাজ করাতে হলে এই ঔষধ সাপে কামড়ানো মানুষকে অনেক পরিমাণ দিতে হয়। কেননা, ঔষধ কার্যকর হতে অনেকটা অ্যান্টিবডির প্রয়োজন হয়।
সাধারণত দেশে মানুষদের সাপে কামড়ানোর ফলে সময় নষ্ট করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উত্তম। এতে চিকিৎসার জন্য সুবিধা হবে ও সময় বাঁচবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সময়ের অভাবে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োগ সম্ভব হয় না। তার আগেই সাপে কামড়ানো ব্যক্তির মৃত্যু হয়।