সমুদ্রসৈকতে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত বা সূর্যোদয় দেখতে ভালোবাসেন অনেকেই। কারও আবার পছন্দ সমুদ্রসৈকতে পা ডুবিয়ে হেঁটে বেড়ানো। আর তাই তো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমুদ্র কবিতায় লিখেছেন, ‘হে সমুদ্র, স্তব্ধচিত্তে শুনেছিনু গর্জন তোমার রাত্রিবেলা; মনে হল গাঢ় নীল নিঃসীম নিদ্রার স্বপ্ন ওঠে কেঁদে কেঁদে।’ কবিতার মতো সমুদ্রের গর্জন শোনার জন্য বালুকাময় সমুদ্রতটে দাঁড়াতে হবে আগে। কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সমুদ্রের বালুকাময় সমুদ্রতট আগের মতো ভালো নেই আর। নতুন গবেষণা বলছে, বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ বালুকাময় উপকূলরেখা মানুষের তৈরি কাঠামোর কারণে বদলে গেছে। এতে উপকূলীয় অঞ্চলের প্রাণের বাস ও বাস্তুতন্ত্রের ওপরে প্রভাব পড়ছে।
উপকূল রেখা কঠিন বা পরিবর্তিত হওয়ার কারণে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হচ্ছে। মানুষ নানা কারণে উপকূলরেখা বদলে ফেলছে। ক্ষয় ও বন্যা থেকে উপকূলরেখা রক্ষা করার জন্য বাঁধ, পোতাশ্রয় নির্মাণ বা রাস্তার মতো কঠিন অবকাঠামো তৈরি করা হয়। এতে সমুদ্রতট প্রায়ই দুর্ভেদ্য কাঠামোয় পরিবর্তিত হচ্ছে।
যদিও এমন কাঠামো সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝড়ের বিরুদ্ধে একটি ভালো প্রতিরক্ষা হিসেবে কাজ করে বলে মনে করেন অনেকেই। কিন্তু এসব কঠিন অবকাঠামো সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করছে। ১৯৫০ দশক থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সমুদ্রতটে কঠিন অবকাঠামো তৈরির পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের যত সমুদ্রতট আছে, তার মধ্যে বঙ্গোপসাগর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কঠিন অবকাঠামো তৈরির জন্য। বঙ্গোপসাগরের ৮৪ ভাগ উপকূল এখন কঠিন কাঠামো দ্বারা অবরুদ্ধ। এ ছাড়াও পশ্চিম ইউরোপ, ভূমধ্যসাগর, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ার মতো বিভিন্ন অঞ্চলের সমুদ্রতটে এমন পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। অনেক এলাকায় উপকূলে ৬০ ভাগের বেশি এলাকায় কঠিন অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি কোল বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে কঠিন কাঠামোর জন্য উপকূলীয় ক্ষয় ও সমুদ্রের দখলের মাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ ঘটনা বিশেষত উদ্বেগজনক। উপকূল এলাকা শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন সৈকত তীব্র ক্ষয়ের জন্য আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা ক্রুজ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল ও হাওয়াইয়ের সৈকতে এমন ক্ষতি দেখা যায়।
গবেষণার তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ঝড়ের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি কার্বন দূষণ বর্তমান হারে চলতে থাকে, তাহলে এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ ২৬ শতাংশ বালুকাময় সৈকত হারিয়ে যেতে পারে। এই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: দ্য কুল ডাউন ও নেচার