সংযুক্ত আরব আমিরাতগামী বাংলাদেশ বিমানের টিকেট না পেয়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রামের প্রবাসীরা। ছুটিতে দেশে এসে করোনা মহামারির লকডাউনে কর্মস্থলে ফিরতে না পেরে দেশে আটকা পড়েন। এখন ফ্লাইট চালুর খবরে টিকেট রি-ইস্যু করতে গিয়ে দেখেন টিকেট নাই। প্রতিবাদে আজ বৃহষ্পতিবার নগরীর ষোলশহর এলাকায় চট্টগ্রাম জেলা বিমান অফিসের সামনে এই বিক্ষোভ করেন শতাধিক প্রবাসী; যার সবাই চট্টগ্রাম ও আশপাশের জেলার অধিবাসী।
ক্ষুদ্ধ প্রবাসী রাফিউল ইসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারিতে যখন দেশে এসেছিলাম তখনই ফিরতি টিকেট কেটেছি। কিন্তু পরে ফ্লাইট বন্ধ থাকায় আর ফিরতে পারিনি। এখন কভিড টেস্ট করে প্রবাসীদের ফেরার অনুমতি দিয়েছে সেই দেশের সরকার। ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটও চালু হয়েছে কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট নাই। কবে নাগাদ চালু হবে তা-ও জানা যাচ্ছে না। এই অবস্থায় ভিসার মেয়াদ পার হওয়ার ঝুঁকিতে আছি।
শারজাহপ্রবাসী আবুল কালাম বলেন, আমাকে ৭ অক্টোবরের মধ্যে চাকরিতে ফিরতে হবে। তা না হলে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এখন বিমান অফিসে এসে কোনো তথ্যই পাচ্ছি না। বুঝে উঠতে পারছি না কবে নাগাদ বাংলাদেশ বিমান চট্টগ্রাম থেকে ফ্লাইট চালু করবে। এখন হয় টিকেট বা টাকা ফেরত দেন; না হয় নতুন টিকেট ইস্যু করেন।
ফটিকছড়ি থেকে আসা আহমদুর রহমান মনের দুঃখে বলেন, অনেকদিন ধরে অপেক্ষা ছিল কবে ফ্লাইট চালুর অনুমতি মিলবে। এখন ফ্লাইট চালুর অনুমতি মিলেছে ঠিকই কিন্তু বিমানের ফ্লাইট নাই। অন্য বিমান সংস্থা ফ্লাইট শুরু করতে পারলেও বাংলাদেশ বিমান কেন পারবে না? এখন আমাদের টিকেটের টাকা ফেরত দেন তাহলে আমরা অন্য বিমানে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই কর্মস্থলে ফিরতে পারব।
ট্রাভেল এজেন্সিরা বলছে, অন্তত একবছর ধরেই এই প্রবাসীরা দেশে আটকা পড়েন। ফ্লাইট চালু না হওয়ায় তারা ফিরতে পারেননি। চাকরিতে ফিরতে না পারায় ধার-দেনা করেই দেশে মাসের পর মাস অতিবাহিত করছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন ফ্লাইট চালুর অনুমতির। এরই মধ্যে যারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন তারা ভিসার মেয়াদ পার হওয়ার আগেই বিভিন্ন বিমান সংস্থায় ফিরে গেছেন। আটকে গেছেন যারা আগে থেকেই ফিরতি টিকেট কিনেছিলেন।
জানতে চাইলে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন চট্টগ্রামের প্রেসিডেন্ট শাহ আলম বলেন, এটা খুবই অমানবিক প্রবাসীদের জন্য। এয়ার অ্যারাবিয়া প্রতিটি ফিরতি টিকেটে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়তি নিচ্ছে। আগে থেকেই প্রবাসীরা বাংলাদেশ বিমানের ফিরতি টিকেট কিনেছেন চড়াদামে; এখন টিকেট রি-ইস্যুতে উচ্চহারে টাকা নিচ্ছে।
তিনি বলেন, দুই বিমান সংস্থারই উচিত এসব যাত্রীদের কর্মস্থলে ফিরতে বিশেষ বিমান চালু করা। একই সঙ্গে কোনো বাড়তি ফি ছাড়াই আগের দামেই টিকেটের ব্যবস্থা করে তাদের চাকরিতে ফিরতে সুযোগ দেওয়া। কারণ এখন যারা আটকে আছেন তারা বাস্তবেই খুবই আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল।
চট্টগ্রাম জেলার বিমান অফিসের অবস্থান হচ্ছে নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেট এলাকায়। সকাল থেকে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী সেখানে জড়ো হতে থাকেন। বিমান কাউন্টারে গিয়ে ফ্লাইটের তারা সঠিক কোনো তথ্য পাচ্ছিলেন না। দুপার গড়াতেই প্রবাসীর সংখ্যা শতাধিক হয়ে যায়। এরপর সবাই মিলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে পুলিশ এসে দীর্ঘক্ষণ বুঝিয়ে তাদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
ঘটনার বিষয়ে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, প্রবাসীরা টিকেটের জন্য বিমান অফিসে গিয়ে ভিড়-বিক্ষোভ করেছিল। আগামী সোমবার বিমানের ফ্লাইটের বিষয়ে সিদ্ধান্তের কথা আমাদের বিমান কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। সেটি বলে উপস্থিত প্রবাসীদের আশ্বস্ত করার পর তারা ফিরে গেছেন।
টিকেটের বিষয়ে বাংলাদেশ বিমান চট্টগ্রাম জেলার এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, আমরা সার্ভিস দেওয়ার জন্য উম্মুখ হয়ে আছি। কেন্দ্রীয় অফিস থেকে সোমবারের আগেই একটি সিদ্ধান্ত আসবে। এরপর থেকেই আমরা যাত্রীদের টিকেট ইস্যু শুরু করব। আর প্রবাসীদের আশ্বস্ত করতে চাই ফিরতি টিকেট রি-ইস্যুতে কোনো বাড়তি ফি নেওয়া হবে না। যেমনটা আমরা ওমান, মদিনার ক্ষেত্রে করেছি।