দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে পুরোনো বেশ কয়েকজন বিদায় নিতে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কেউ প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। অন্তত দু’জন উপাচার্য বিরূপ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ত্যাগ করে রাজধানীতে চলে এসেছেন এবং মেয়াদপূর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন।
শূন্য হতে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগ পেতে বিভিন্ন সরকার সমর্থক শিক্ষকের মধ্যে কিছুদিন ধরে শুরু হয়েছে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নীতিনির্ধারকদের কাছে এ পদের জন্য ব্যাপক লবিং ও রাজনৈতিক তদবির শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী শিক্ষকরা। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি সরকারের পূর্ণ সচিব সমমানের।
মর্যাদা এবং সুযোগ-সুবিধার দিকও থেকে এ পদটি খুব আকর্ষণীয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া গেছে।
নতুন নিয়োগ ১২ বিশ্ববিদ্যালয়ে: আগামী জুনের মধ্যে দেশের অন্তত ১১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ শূন্য হবে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ গত ৪ জানুয়ারি থেকে শূন্য রয়েছে। কারা উপাচার্য হচ্ছেন, তা নিয়ে এই ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অংশীজনের মধ্যে রয়েছে নানা কৌতূহল। দুই মেয়াদের বেশি আর কাউকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হবে না- সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল এ রকম একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আবদুস সোবহানের উপাচার্য পদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৬ মে। ২০১৭ সালের ৭ মে তিনি এ পদে দ্বিতীয়বারের মতো নিয়োগ পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি নিজের মেয়ে ও জামাতাকে চাকরি দিতে গিয়ে শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা কমান। সরেজমিনে দু’দফায় তদন্ত করে গত বছরের ২০ ও ২১ অক্টোবর ইউজিসির তদন্ত দল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে।
প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত বিভিন্ন প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের জন্য তিনজনকে দায়ী করা হয়। তারা হলেন- উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান, উপ-উপাচার্য চৌধুরী মো. জাকারিয়া ও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আবদুল বারী। এ তিনজনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল সবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের উৎস অনুসন্ধানের সুপারিশ করে ইউজিসি। উপাচার্য এবং তার ওপর নির্ভরশীল পারিবারিক সদস্যদের সম্পদ, আয়ের উৎস, ব্যাংক হিসাব এবং আয়-ব্যয়ের বিবরণী সরকারের বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান বা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে অনুসন্ধানের জন্য সুপারিশও করা হয় প্রতিবেদনে।
এতে ইউজিসির তদন্তে চরম অসহযোগিতা করায় অবিলম্বে পদ থেকে সরিয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়। অবশ্য অধ্যাপক বারী সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুস সোবহান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লাইড ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। বয়স ৬৫ বছর উত্তীর্ণ হওয়ায় তিনি ২০১৭ সালের ২১ জুন চাকরি থেকে অবসরে যান।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে, আর মাত্র তিন মাস মেয়াদ বাকি থাকায় অধ্যাপক আবদুস সোবহানকে অপসারণ করা হচ্ছে না। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে এ পদে এবার যাদের নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে, তাদের মধ্যে একজন নারী শিক্ষকও রয়েছেন। যে তিনজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদের জন্য সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. জিনাত আরা, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী সরওয়ার জাহান ও বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক শফিকুন্নবী সাদমানী। অধ্যাপক জিনাত আরার বাবা ও ভাই আওয়ামী লীগদলীয় এমপি ছিলেন। চৌধুরী সরওয়ার জাহান সাবেক উপাচার্য মুহম্মদ মিজান উদ্দিনের সময়ে উপ-উপাচার্য ছিলেন। আর অধ্যাপক শফিকুন্নবী সাদমানী স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী নীল দলের প্রভাবশালী নেতা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশীদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি। তিনি ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে এ পদে নিযুক্ত হন। বিশিষ্ট এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ছিলেন। সরকারি-বেসরকারি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কলেজ শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে একজন নারী শিক্ষকসহ অন্তত সাতজন শিক্ষকের নাম জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। যারা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাবশালী শিক্ষক।
তাদের মধ্যে রয়েছেন- সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী ও আইইআরের অধ্যাপক এবং নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানও এ পদে নিজেকে দেখতে চান বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমরান চৌধুরীকেও দেখা যেতে পারে। তিনি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নিকটাত্মীয় এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিরও আস্থাভাজন। অধ্যাপক এমরান এর আগে বর্তমান সরকারের আমলে পাঁচ বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ছিলেন। তিনি যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা।
অবশ্য যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের অধিকাংশই নানা কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হতে আগ্রহী নন। অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কোথায় যাব? এখানেই ভালো আছি।’ আর অধ্যাপক সাদেকা হালিম সরাসরিই বলেন, ‘ঢাবি ছেড়ে অন্য কোথাও যেতে ইচ্ছুক নই।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়: যুবলীগের আরেক সাবেক নেতা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমানের এই পদে দ্বিতীয় দফার মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৯ মার্চ। তিনি ২০১৭ সালের ২০ মার্চ এ পদে যোগ দেন। উপাচার্য হওয়ার আগে অধ্যাপক মীজানুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপকের নাম নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে যারা আলোচনায় রয়েছেন, তারা সবাই জবির ক্ষেত্রেও আলোচনায় রয়েছেন। এদের একজনকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হলে অপর কাউকে জগন্নাথে দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমানে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারের দায়িত্বে থাকা ড. সুব্রত কুমার আদিত্যর নামও ব্যাপকভাবে শোনা যাচ্ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য পদে আগ্রহী শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন- ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক সেলিম হোসেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আনোয়ারা বেগম এবং সাবেক ডিন ও মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সাইফুদ্দিন। তাদের মধ্যে অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং তিনি বর্তমান সরকারের আমলে পাঁচ বছর পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সদস্য ছিলেন। আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আশির দশকে রাবির ছাত্রনেতা ছিলেন। জবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি।
বাউবি: বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এ মাননান আগামী ২৩ মার্চ বিদায় নেবেন। তিনি ২০১৭ সালের ২৪ মার্চ এ পদে যোগ দেন। এ পদে সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোকাদ্দেম হোসেনের নাম। অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মমতাজউদ্দিন পাটোয়ারির নামও নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও একজনকে এ পদে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে এবার।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: মেয়াদের শেষ মুহূর্তে এসে গত শনিবার তিনজন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত ও অপসারণ করে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। চলতি মাসের ২৯ তারিখে মেয়াদ শেষ হবে তার। তিনি তার নিজ কর্মস্থল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরত যাবেন।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে খুবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন, সাংবাদিক গোলাম মোস্তফার ছেলে অধ্যাপক ড. অনির্বাণ মোস্তফা, ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আহসানুজ্জামান ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুবারের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শাহীনুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। এর বাইরে খুবির বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোসাম্মাৎ হোসনে আরাও এ পদের অন্যতম দাবিদার। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোজাম্মেল হোসেনের ছেলে। অধ্যাপক আহসানুজ্জামানও খুবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি এবং সিন্ডিকেট সদস্য।
অধ্যাপক শাহীনুর রহমান অবশ্য সমকালকে জানান, খুবির উপাচার্য হওয়ার বিষয়ে তার নিজের কিছু জানা নেই। আর অধ্যাপক মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘সরকারের বিবেচনায় আছি কিনা, বলতে পারছি না। তবে দায়িত্ব পেলে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করব।’
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: গত ৪ জানুয়ারি থেকে শূন্য রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ। সর্বশেষ উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশীদ মেয়াদ শেষ করে ওই দিন বিদায় নেন। এ পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক স্বদেশ কুমার সামন্ত, মুক্তিযোদ্ধা ও ডিন অধ্যাপক মোস্তফা জামাল এবং বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী- এ তিনজনের যে কেউ নিয়োগ পেতে পারেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কাউকে এখানে উপাচার্য করা হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. কনক কান্তি বড়ূয়ার চার বছরের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২২ মার্চ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে বর্তমান তিন উপ-উপাচার্যের যে কাউকে দেখা যেতে পারে আগামীতে। তারা হলেন- উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. শাহানা আখতার রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. রফিকুল আলম এবং উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন। তাদের মধ্যে অধ্যাপক ডা. শাহানা আখতার রহমান উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সহধর্মিণী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়ার মেয়াদ ফুরোচ্ছে আগামী ১০ জুন। তার মেয়াদ শেষে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দেখা যেতে পারে বর্তমান ট্রেজারার অধ্যাপক তোফায়েল ইসলাম ও এগ্রিকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দিনকে। অধ্যাপক তোফায়েল ইসলাম ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের ভাই। তবে বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়াও আরেক মেয়াদে নিয়োগ পেতে চান বলে জানা গেছে।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়: দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল কাসেমের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ মাসের শেষ দিন, ৩১ জানুয়ারি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে বর্তমানে ছুটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন। অপেক্ষা করছেন মেয়াদ শেষ হওয়ার। এরপর এ পদে নিযুক্ত হতে পারেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন ও সাবেক রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. বলরাম রায়। চাঁদপুরের বাসিন্দা অধ্যাপক বলরাম রায় শিক্ষামন্ত্রীরও আস্থাভাজন শিক্ষক। তবে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এখানে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৯ মে। এখানে নিয়োগ পেতে পারেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের একজন অধ্যাপক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও দু’জন অধ্যাপকের নাম শোনা যাচ্ছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়: রংপুরের এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৩ জুন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন চলছে। উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই অবস্থান করছেন ঢাকাতে। ক্যাম্পাসে নিয়মিত না থাকায় তার অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান ও বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শরীফা সালোয়া ডিনার মধ্যে যে কাউকে দেখা যেতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে। আবার ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও কোনো অধ্যাপককে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়: সিরাজগঞ্জের রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ ঘোষের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১০ জুন। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে আবারও এ পদে নিয়োগ পেতে পারেন। আবার তার জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অন্য কোনো জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকও নিয়োগ পেতে পারেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) এ কে এম আফতাব হোসেন প্রামাণিক বলেন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে। এগুলো নিয়ে কাজ চলছে, প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। যথাসময়ে এসব পদে নিয়োগ হবে। কোনো কারণে কোথাও নিয়োগ দিতে দেরি হলে সংশ্নিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যরা উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকবেন।