সোহাগ হোসেন দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত-সমালোচিত উপচার্য প্রফেসর (অব:) মো: হারুনর রশীদ। গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৭টায় অনুগত সহকর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছা জানিয়ে অনেকটা নিরবেই ক্যাম্পাস ত্যাগ করলেন।
পবিপ্রবিতে কাটখোট্টা চরিত্রের এ প্রবীণ শিক্ষক জোট সরকারের সময় একটি বিরুপ রাজনৈতিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে কয়েকদিন কারাবাসের পুরস্কার হিসেবে গত ২০১৬সালের ৩জানুয়ারি পবিপ্রবি’র ভিসি নিযুক্ত হন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী শৃঙ্খলা উন্নয়ন, স্বচ্ছতা- জবাবদিহিতা নিশ্চিৎকরণ ও দূর্ণীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার পাশাপাশি উচ্চশিক্ষা বিস্তারের উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যথাসময়ে আগমন, প্রস্থান তদারকি করতে একেক দিন কোন না কোন ডিপার্টমেন্টের সামনে আকস্মিক দাড়িয়ে থেকে বিলম্বে আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার, তিরস্কারসহ কৈফিয়ত তলব, সাময়িক বরখাস্তসহ বিভাগীয় পদক্ষেপ গ্রহন করে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেন। চাকুরী জীবনে একজন অত্যন্ত সৎ, অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকের সুনাম অর্জণ করলেও ভিসি নিযুক্তির পর তার সেই ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারেননি। আর্থিক নানা অনিয়ম-দূর্ণীতি, উন্নয়ন কর্মে কমিশন আদায়, লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে চাকুরী দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার গুণজন ক্যাম্পাসে ও বাইরে চাউর হয়ে আছে। বিশেষত: টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের নিয়মিত মামলায় গ্রেফতার ও কারাবাসের কারনে সাময়িক বরখাস্তকৃত একজন প্রকৌশলীকে মামলা চলমান অবস্থায় প্রচলিত চাকুরি বিধিবিধান উপেক্ষা করে পূর্ণ বেতন-সুযোগ সুবিধাসহ চাকুরীতে পুণ:বহাল করে ব্যাপক বিতর্কিত হন। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের লেনদেনে নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা ছাড়াই তিনি এমন বিতর্কিত কাজটি করেছেন।
এ ছাড়া ঠুনকো অভিযোগে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে চাকুরীচ্যুত করে সংশ্লিষ্টদের বিরাগ ভাজনও হয়েছেন। সর্বশেষ পরিকল্পনা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাড়ে ৪শ’ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের বরাদ্দের কমিশন, বিভিন্ন ফ্যাকাল্টিতে অন্তত: ২০জন প্রভাষক, ১জন রেজিষ্টার, ২জন সেকশন অফিসারসহ বিশাল নিয়োগের বাণিজ্যের প্রক্রিয়া শুরু করলেও স্থানীয়দের প্রতিবাদ, বিক্ষোভে তা ভেস্তে গেছে। লেজেগোবরে অবস্থার মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বাধ্য হন এবং এর মধ্যে ৪জানুয়ারি তার ভিসি পদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। তার মেয়াদবৃদ্ধির উচ্চতর তদবিরে আশ্বাসে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ না করেই গেষ্ট হাউজে অবস্থান করছিলেন। ৬জানুয়ারি সরকার ভিসি পদে
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার ও জেষ্ঠ্যতম ডীন অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তকে অন্তবর্তিকালীন উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার তিনি অনেকটা নিরবে নিভৃতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক (চলিত দায়িত্ব) ডেপুটি রেজিষ্ট্রার ড. মো: কামরুল ইসলাম জানান, মেয়াদোত্তীর্ণের সর্বশেষ দিনে (৪ জানুয়ারি) স্যার (ড. হারুনর রশীদ) রেজিষ্ট্রারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে ক্যাম্পাসেই ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকালে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার নিজের পৈত্রিক বাড়ি ঝালকাঠির রাজাপুরে চলে যান।