1. msuzon.du@gmail.com : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. maharaj.cu@gmail.com : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. rajib.du1415@gmail.com : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. support@renexlimited.com : অনলাইন : Renex অনলাইন
বিচার প্রশাসনে রং বদলের খেলা—ফ্যাসিবাদের দোসররা কি নিরাপদেই রয়ে গেল? - Dainik Deshbani
সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

বিচার প্রশাসনে রং বদলের খেলা—ফ্যাসিবাদের দোসররা কি নিরাপদেই রয়ে গেল?

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার বিপ্লব দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল। গণআন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান ঘটানোর দাবি উঠলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, পূর্ববর্তী শাসনের সুবিধাভোগী ও দোসররা কৌশলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিচার বিভাগে বিশেষ কিছু কর্মকর্তা, যারা ফ্যাসিবাদী সরকারের সুবিধাভোগী ছিলেন, তারা কীভাবে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন এবং নিজেদের জন্য সুবিধাজনক পোস্টিং নিশ্চিত করেছেন, তা গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে।

তাসমিনা-আশেক দম্পতির প্রশাসনিক সুবিধাভোগের ফিরিস্তি

প্রশাসনিক নথিপত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা জনাব তাসমিনা খান এবং তার স্বামী আশেক ইমাম তাদের পুরো চাকরিজীবন জুড়ে আওয়ামী ব্যানারে সুবিধাজনক পোস্টিং পেয়ে এসেছেন।

তাসমিনা খান:
• ২০১৭ সালে সহকারী জজ হিসেবে নারায়ণগঞ্জে যোগদান করেন।
• ২০২২ সালে সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতি পান, তৎকালীন শাসনের একেবারে শেষ ভাগে।
• ২০২৩ সালে তাকে ঢাকায় স্পেশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পদে বদলি করা হয়, যেখানে তিনি এখনও বহাল আছেন।

পুরো ৮ বছর ২ মাসের কর্মজীবনজুড়ে তিনি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বাইরে কখনও বদলি হননি।

আশেক ইমাম:
• ২০১৮ সালে ঢাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পান, যা তিনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল থাকেন (মোট ৫ বছর ৩ মাস)।
• এর আগে তিনি নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালন করেন।
• তার ১৩ বছরের চাকরিজীবনজুড়ে তিনি শুধু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে ছিলেন, যা সাধারণ বদলি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
• তিনি ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে আগের সরকারের ঘনিষ্ঠ মনে করার যথেষ্ট কারণ দেয়।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর ট্রায়াঙ্গেলের রহস্য

সরকারি চাকরিতে সাধারণত বদলির নিয়ম অনুযায়ী বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়া হয়, যাতে বিচারপ্রার্থী ও প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রতি নিরপেক্ষতা বজায় থাকে। কিন্তু তাসমিনা খান ও আশেক ইমামের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তারা একই নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যেই ঘুরপাক খেয়েছেন।

এটি কি নিছক কাকতালীয়, নাকি উচ্চপদস্থ মহলের সঙ্গে আতাতের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং ধরে রাখার একটি সুপরিকল্পিত কৌশল? বিশেষ করে, ঢাকার মতো ক্ষমতার কেন্দ্রে দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনের সুবিধা কীভাবে পেলেন তারা? কেন এই সুবিধাপ্রাপ্তি?

তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলির ইতিহাস বিচার করলে স্পষ্ট হয় যে, তারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত একটি প্রশাসনিক বলয়ের অংশ ছিলেন। বিশেষত, ফ্যাসিবাদী শাসনামলে তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহায়তা করেছেন।

২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে আশেক ইমাম ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা তাকে তৎকালীন সরকারের ঘনিষ্ঠ মহল বলে সন্দেহ করার যথেষ্ট ভিত্তি দেয়। সেই সরকার ক্ষমতা হারালেও, তিনি আবারও রাজধানীর পাশ্ববর্তী একটি জেলা (শরীয়তপুর) দখলে রেখেছেন।

নতুন প্রশাসনের সঙ্গে আতাত?

প্রশ্ন হচ্ছে, ৫ আগস্টের বিপ্লবের পরও তারা কীভাবে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিলেন? নতুন শাসকগোষ্ঠী কেন তাদের দায়িত্ব থেকে অপসারণ করেনি?

দুইটি সম্ভাবনা এখানে দেখা যায়:

1. নতুন প্রশাসনের নীতিনির্ধারকরা তাদের ব্যবহার করতে চায়, হয়তো নিজেদের স্বার্থেই।
2. তারা ক্ষমতার পালাবদলের আগেই যথেষ্ট কৌশল অবলম্বন করে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন, হয়তো নতুন শাসনের ঘনিষ্ঠ মহলে নিজেদের জায়গা করে নিয়ে।

৫ আগস্টের বিপ্লবের অন্যতম দাবি ছিল প্রশাসনে শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে পুরনো সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করে অপসারণ করা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বহু পুরনো মুখই কৌশলে টিকে গেছে এবং গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব জনাব আবু তাহেরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তার পক্ষ থেকে কোন সাড়া পাওয়া যায় নি।

বিচার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে যদি পুরনো শাসনের সুবিধাভোগীরা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়, তবে এটি গণআন্দোলনের সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এই পরিস্থিতির সমাধানে নতুন প্রশাসনের উচিত স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যক্তিদের অতীত ভূমিকা মূল্যায়ন করা এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। শুধু তাসমিনা-আশেক দম্পতি ই না; বিচার বিভাগে এমন আরো অনেক রং বদলানো ফ‍্যাসিস্টের দোসর রয়েছে যারা সরকারকে অস্থিতিশীল করতে নানান রকম ষড়যন্ত্রে লিপ্ত । তাদের বিরুদ্ধে এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিপ্লব যে বেহাত হবে তা মোটামুটি সুনিশ্চিত ।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব