দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ক্রমেই কমছে। রোগতত্ত্ব ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় শনাক্তের হার পাঁচ শতাংশ কিংবা তার চেয়ে কম থাকলে এবং চার সপ্তাহ এ হার অব্যাহত থাকলে করোনা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে বলে বিবেচিত হবে। গত এক দুই সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার হিসাবে নতুন রোগী শনাক্তের হার চার শতাংশে নেমে এসেছে। সুস্থতার হারও প্রায় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি। আগের তুলনায় এক দশমিক ৫০ শতাংশ কম।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় গত সাড়ে আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন আটজনের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯৫০ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০টি ল্যাবরেটরিতে ১৪ হাজার ৯২৪টি নমুনা সংগ্রহ ও ১৪ হাজার ৮৪৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ৩৫ লাখ ৩০ হাজার ২৭৪টি। এ সময়ে নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয়েছেন ৬১৯ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচ লাখ ৩০ হাজার ৮৯০ জনে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪৮৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন চার লাখ ৭৫ হাজার ৫৬১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার চার দশমিক ১৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫.০৪৫ এবং শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯.০৫৯৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫০ শতাংশ।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুসারে, বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ৯ কোটি ৮০ লাখ ৮৯ হাজার ৫৩৬ জন। এতে মারা গেছেন ২১ লাখ ৪০৪ জন। আর সুস্থ হয়েছেন সাত কোটি ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৫৩ জন। করোনা মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে।
বিশ্বের করোনায় আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতায় ২১৯টি দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। শীর্ষ দশটি দেশের তালিকায় রয়েছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়া, ইউকে, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, তুরস্ক এবং জার্মানি।
স্বাস্থ্য ও রোগতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যেকোনো সময় সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় সংক্রমণে সংক্রমিত ও মৃত রোগীর সংখ্যা বেশি হলেও দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে সার্বিক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় এবং আগে থেকেই প্রতিরোধ ও সচেতনতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কম রয়েছে।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে যেকোনো সময় সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। গত বছর দুই ঈদের সময় সংক্রমণ ও মেত্যু বেশি ছিল। এরপর মানুষ যখন সাবধানতা অবলম্বন করেছে তখন কমতে শুরু করে।’
তিনি বলেন, ‘শীতকালে করোনা বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলেও ওয়াজ মাহফিল, বাণিজ্যমেলাসহ বিভিন্ন মেলা বন্ধ রাখার ফলে সংক্রমণ কমেছে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখারও ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। যদিও দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জাতির ক্ষতি হচ্ছে।’
সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে, এ বিষয়টিকে কীভাবে দেখেন জানতে চাইলে জানান, তিনি নিজেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পক্ষে। তবে খোলার আগে কী কী করতে হবে ,তার ওপর জোর দিতে হবে। ক্লাসরুম যেন গাদাগাদি না হয়, সেগুলোতে যেন পর্যাপ্ত আলোবাতাস প্রবেশ করতে পারে, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ ক্লাসগুলোকে শিফটিং করতে হবে। রোগী শনাক্তের জন্য নিয়মিত সার্ভিল্যান্সের ব্যবস্থা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়মিত যোগাযোগ ও ফলোআপ, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন, হাসপাতালে চিকিৎসা ইত্যাদি নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণারয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রথমেই বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলো খুলে পর্যবেক্ষণ করে এরপর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও কলেজ খোলা উচিত বলে জানান তিনি।