পোশাক খাতের তিন মাস পর বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে সরকার। মিনিমাম ওয়েজ বোর্ডসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ খাতের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ হতে যাচ্ছে, যা পোশাক খাতের শ্রমিকদের চেয়ে আড়াই হাজার টাকা কম।
শ্রমিক নেতারা এই মজুরিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে দিয়ে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ও বাজারদর বিবেচনায় মজুরি নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন। যদিও এ খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, আগের চেয়ে অনেকটাই বাড়ানো হচ্ছে মজুরি।
প্রস্তাবিত মজুরির সপক্ষে যুক্তি দিয়ে বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা বলছেন, পোশাক খাতে যেখানে ৫৬ শতাংশ মজুরি বাড়ানো হয়েছে, সেখানে বস্ত্র খাতে মজুরি বাড়ানো হচ্ছে ৭৫ শতাংশ। এ ছাড়া বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের কাজ পোশাক খাতের তুলনায় অপেক্ষাকৃত হালকা বলেও দাবি করেন তারা।
মিনিমাম ওয়েজ বোর্ডের সচিব রাইসা আফরোজ বলেন, বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের মিনিমাম ওয়েজের ড্রাফট চূড়ান্ত হয়েছে। শীঘ্রই এ বিষয়ে গেজেট প্রকাশ করা হবে। প্রস্তাবিত মজুরি বর্তমান বাস্তবতায় কতটা যৌক্তিক এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারখানা মালিক ও শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিদের সম্মতির ভিত্তিতেই সর্বনিম্ন এ মজুরি ঠিক করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, স্পিনিং, উইভিং, ডায়িং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিংসহ সংগঠনটির সদস্যভুক্ত কারখানা ১ হাজার ৭৮০টি। বিটিএমএর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মনসুর আহমেদ বলেন, এসব কারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ৫ লাখের মতো হবে। এ ছাড়া সদস্যবহির্ভূত কারখানা হিসাব করলে শ্রমিক সংখ্যা ৮ লাখের বেশি হবে বলে জানান তিনি। তবে তিনি বিটিএমএর সদস্যবহির্ভূত কারখানার সংখ্যা জানাতে পারেননি।
মনসুর আহমেদ বলেন, ‘বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের নতুন ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার টাকা হবে বলে আমরা জেনেছি। এই মজুরি একেবারে কম নয়।’ এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, পোশাক খাতে মজুরি বেড়েছে ৫৬ শতাংশ (৮ হাজার থেকে বেড়ে ১২ হাজার টাকা হয়েছে), আর আমাদের এ খাতে বাড়ছে ৭৫ শতাংশ।
বস্ত্র খাতে মজুরি নির্ধারণ-সংক্রান্ত বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি ছিলেন মো. শাহজাহান সাজু। তিনি বলেন, আমাদের দাবি ছিল ২৫ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু বোর্ডের সব পক্ষ ১০ হাজার টাকায় সম্মত হয়েছে। শাহজাহান সাজু বলেন, এই মজুরি বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তবুও তিনি নতুন এ মজুরি মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, সভায় সবাই এই মজুরিতে সম্মত হয়েছেন। এ ছাড়া পোশাক খাতের বিবেচনায় এ খাতে বেশি হারে বেড়েছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সভাপতি তাসলিমা আখতার বলেন, এই মজুরি ‘গ্রহণযোগ্য নয়’; কারণ বর্তমান মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় এই মজুরিতে শ্রমিকদের পক্ষে জীবন নির্বাহ করা অসম্ভব। আমরা পোশাক শ্রমিকদের জন্য ২৫ হাজার টাকার ন্যূনতম মজুরির কথা বলেছি। এখন বিভিন্ন খাতে একই দাবি উঠছে। আমরা চাই বস্ত্র খাতের শ্রমিকদের জন্যও এই মজুরি রিভিউ করে তা বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়ানো হোক।
গত ডিসেম্বর থেকে পোশাক খাতের শ্রমিকদের বর্ধিত মজুরি কার্যকর হয়েছে। যদিও অনেক সংগঠন ২৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি চাইলেও সরকার তা ১২ হাজার ৫০০ টাকা চূড়ান্ত করেছে। মজুরি বৃদ্ধি-সংক্রান্ত দাবিতে আন্দোলনের জেরে চারজন শ্রমিক নিহতও হয়েছেন। পোশাক খাতের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির পর বস্ত্র খাতেও এই দাবি উঠতে থাকে। গাজীপুর, সাভারে বিভিন্ন কারখানায় অসন্তোষের ঘটনাও ঘটে। এর প্রায় এক মাস পর চূড়ান্ত হতে যাচ্ছে এ খাতের মজুরি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে এ খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি চূড়ান্ত হয়েছিল, যার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৭১০ টাকা।
বস্ত্র খাতে ১০টি গ্রেডে মজুরি নির্ধারণ হচ্ছে, যা আগেও একই ছিল। সর্বশেষ বা দশম গ্রেডে ন্যূনতম মজুরির এর এলাকাভিত্তিক তিনটি ধাপ হচ্ছে। বিভাগীয় শহরে ১০ হাজার ৭০০ টাকা, জেলা শহরে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা এবং উপজেলা ও অন্যান্য এলাকায় হচ্ছে ১০ হাজার টাকা। আর সর্বোচ্চ বা প্রথম গ্রেডে মজুরি হতে যাচ্ছে ১৫ হাজার ২৭৩ টাকা। জানা গেছে, পোশাক খাতের মতো শক্তিশালী বা সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন বা ফেডারেশন টেক্সটাইল খাতে তেমন একটা নে