কল্পনা বেগম বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক কবির বেপারীর স্ত্রী। স্বামীর ভ্যানের চাকা না ঘুরলে সংসারে উনুন জ্বলে না। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, কল্পনা বেগমকে আয়কর পরিশোধের নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
কল্পনা বেগম একাই নন, তার মতো উপজেলার দুই গ্রামের আরও ৩ জন দরিদ্র মানুষের নামে আয়কর পরিশোধের নোটিশ এসেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গৃহবধূ কল্পনা বেগম ছাড়া আয়কর পরিশোধের নোটিশ পাওয়া অন্যরা হলেন- মাহিলাড়া ইউনিয়নের শরিফাবাদ গ্রামের থ্রিহুইলার (মাহিন্দ্রা) চালক ফারুক হোসেনের স্ত্রী সেলিনা বেগম, দিনমজুর মহসিন বেপারী ও বিল্বগ্রাম এলাকার দিনমজুর চানমিয়া সরদারের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম।
দিনমজুর মহসিন বেপারী, কল্পনা বেগম ও সেলিনা হোসেন সম্পর্কে আত্মীয়। নোটিশে তাদের গ্রাম মাহিলাড়া উল্লেখ করা হলেও তারা শরিফাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয়রা জানান, নোটিশপ্রাপ্ত চারজনই দরিদ্র। একজন দিনমজুর। আর তিন নারীর মধ্যে একজনের স্বামী ভ্যানচালক। এক জনের স্বামী থ্রিহুইলার (মাহিন্দ্রা) চালক। আরেকজনের স্বামী দিনমজুর।
গত ২৪ আগস্ট মনোয়ারা বেগমের নামে, ২২ আগস্ট সেলিনা বেগমের নামে ও ২৮ জুলাই কল্পনা বেগম ও মহসিন বেপারীর নামে পৃথকভাবে বরিশাল উপ-করকমিশনার কার্যালয়ের বৈতনিক শাখা থেকে উপ-করকমিশনার স্বাক্ষরিত নোটিশগুলো ইস্যু করা হয়।
নোটিশপ্রাপ্ত গৃহবধূ কল্পনা বেগম জানান, নোটিশ হাতে পওয়ার পর কিছুই বুঝিনি। পরে নোটিশটি মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুকে দেখাই। তিনি নোটিশের লেখা পড়ে জানিয়েছেন সম্পদ বা বাৎসরিক আয় বেশি থাকলে আয়কর দিতে হয়। সেই নোটিশ দেয়া তাকে হয়েছে।
তিনি বলেন, শুনেছি বাড়ি, গাড়ি থাকা বড় লোকদের আয়কর দিতে হয়। আমার স্বামী একজন ভ্যানচালক। ভ্যানের চাকা না ঘুরলে সংসারের চলে না। আমরা কেন আয়কর দেবো?
গৃহবধূ মনোয়ারা বেগম জানান, আমার স্বামী দিনমজুর। সন্তানদের নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোরকম বেঁচে আছি। ঝুপড়ি ঘরে থাকি। জমির খাজনা দেওয়ার কথা জানি। কিন্তু আয়কর দেওয়ার কথা কখনো শুনিনি।
মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, নোটিশ পেয়ে ওই তিন গৃহবধূ ও দিনমজুর মহসিন বেপারীর বা তাদের স্বজনরা কিছুই বুঝতে পারছিলেন না। এরপর তারা আমার কাছে নোটিশগুলো নিয়ে আসেন। পড়ে বুঝতে পারি আয়কর পরিশোধ না করায় তাদেরকে নোটিশ করা হয়েছে।
সৈকত গুহ পিকলু বলেন, নোটিশপ্রাপ্ত চারজনই দরিদ্র পরিবারের। এর মধ্যে মহসিন বেপরী এবং সেলিনা বেগমের স্বামীর নামে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির রেশন কার্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া অপর দুই নারীর স্বামীও গরিব। তাদেরও সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা নিয়ে চলতে হয়। তবে তাদের কেন আয়কর পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়। হয়তো কোথাও ভুল হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস জানান, নোটিশপ্রাপ্ত চারজনের পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাকে জানানোর পর বরিশাল কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার (প্রশাসন) মো. আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
বরিশাল কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার (প্রশাসন) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ওই চারজনের জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে কেউ হয়তো আয়কর প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন। যদি কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ব্যবহার করে ই-টিআইএন গ্রহণ করেন, নিয়ম অনুযায়ী তাকে আয়করের আওতায় নিয়ে আসা হয়। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ঠিকানায় রিটার্ন দাখিলের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারা, কেন, কোন উদ্দেশ্যে তাদের আইডি নম্বর ব্যবহার করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের জরিমানা মওকুফ ও আয়কর পরিশোধের দায় থেকে মুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে।