মেরু অঞ্চলের শীতকালীন প্রকৃতি পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চল থেকে অনেক ভিন্ন থাকায় কয়েক সপ্তাহ থেকে মাসব্যাপী সূর্যের আলো পুরোপুরি অনুপস্থিত থাকে। এ সময়টি হল ‘পোলার নাইট’।
এমন দীর্ঘ অন্ধকারে এখানকার মানুষের জীবনে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। ঘুমের চক্র থেকে শুরু করে মানসিক স্বাস্থ্যে এর প্রভাব স্পষ্ট। তবে এখানকার মানুষ যেভাবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, তা সবার জন্য শিক্ষণীয়।
রোববার (০৫ জানুয়ারি) পোলার নাইট নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে মানুষের জীবনযাপনের বিভিন্ন বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
পোলার নাইট : অন্ধকারে রঙিন আলোর মায়া
পোলার নাইট মানেই পুরোপুরি অন্ধকার নয়। সূর্যের আলো অনুপস্থিত থাকলেও বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তর থেকে ক্ষীণ সূর্যরশ্মি নীল, গোলাপি ও বেগুনি রঙের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। চাঁদের আলো, তারার ঝিলিক এবং বরফে প্রতিফলিত আলো পুরো পরিবেশকে উজ্জ্বল করে তোলে। এই মায়াময় পরিবেশ দীর্ঘ অন্ধকারের মধ্যেও এক ধরনের সান্ত্বনা জোগায়।
দীর্ঘ অন্ধকারের প্রভাব
শীতকালে সূর্যালোকের অভাবে অনেকের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব পড়ে। বিশেষ করে ঘুমের চক্র বাধাগ্রস্ত হয়। অনেকেই সিজনাল অ্যাফেকটিভ ডিসঅর্ডার (এসএডি) নামে বিষণ্নতায় ভোগেন। ইউরোপে প্রায় ২-৮ শতাংশ মানুষ এই সমস্যার শিকার হন।
তবে পোলার অঞ্চলের আদিবাসী স্যামি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঘুমজনিত সমস্যা তুলনামূলক কম। তাদের জীবনযাত্রা ও মানসিকতার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এই সমস্যার বড় সমাধান হিসেবে কাজ করে।
ইতিবাচক মনোভাবের প্রভাব
নরওয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা শীতকালকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন—যেমন, স্কি করা, আগুনের পাশে সময় কাটানো বা শীতকালীন বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত থাকা—তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
গবেষক কারি লাইবোউইটজের মতে, শীতকালকে নেতিবাচকভাবে দেখা মানুষ বড় আলো জ্বালিয়ে অন্ধকার ঠেকানোর চেষ্টা করেন, যা উল্টো সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে। বরং আলোর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও স্বাভাবিক জীবনযাপন অনেক বেশি কার্যকর।
ঘুমের চক্রে আলোর ভূমিকা
পোলার নাইটের সময় মেলাটোনিন উৎপাদনের তারতম্য ঘুমের চক্রে প্রভাব ফেলে। তবে আলোর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব। রাতে হালকা আলো ব্যবহার এবং ধীরে ধীরে আলো কমানো মেলাটোনিন উৎপাদন সক্রিয় করে। নীল আলো সমৃদ্ধ বিশেষ ল্যাম্প বা ডিভাইস ব্যবহার ঘুমের মানোন্নয়ন করতে পারে।
সকালের ব্যায়াম ও প্রকৃতির সংস্পর্শ
ফিনল্যান্ডের ইনারি অঞ্চলের বাসিন্দা এসথার বেরেলোভিচ প্রতিদিন দুই ঘণ্টা হাঁটা বা স্কি করেন। তিনি বলেন, মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা না হলে আমি বাইরে হাঁটতে যাই। আলো পাওয়ার সময়টা বাইরে কাটানো খুবই জরুরি। সকালের শারীরিক ব্যায়াম ঘুমের চক্র স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
কর্মস্থলে শৃঙ্খলার গুরুত্ব
শীতকালে কর্মস্থলে নির্ধারিত সময় মেনে চলা ঘুমের চক্র ঠিক রাখতে সহায়ক হতে পারে। সুইডেনের কিরুনায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, শীতকালে মানুষ গড়ে ৩৯ মিনিট দেরিতে ঘুমাতে যান, ফলে তাদের ঘুমের সময় কমে যায়।
শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা
পোলার নাইটের দীর্ঘ অন্ধকারে মানুষ যেভাবে জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্য তৈরি করে, তা থেকে সবার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নেওয়ার আছে। আলো ব্যবস্থাপনা, সকালের ব্যায়াম, এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য দারুণ অনুপ্রেরণা হতে পারে।