গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের কলেজগেট থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত সংযোগ সড়কে তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। সেতুগুলো মেরামত করা না হলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
সড়ক ও সেতুগেুলোর বেহালের জন্য যানবাহন চলাচল প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মহানগরের পূবাইলবাসী।
সড়ক ও ঝুঁকিপূর্ণ সেতু তিনটিকে পূবাইলের দুঃখ বলেও অনেকেই আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু ‘দেখেও কেউ দেখছে না’ বলে এলাকাবাসী অভিযোগের তীর ছুড়ছেন নগর উন্নয়ন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
এ তিনটি সেতুর মধ্যে ৪১নং ওয়ার্ডের ভাদুন এলাকার সেতুর অবস্থা একেবারেই নাজুক। এ নিয়ে প্রায় দুবছর আগে দৈনিক বেহালের একটি সচিত্র প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। পরবর্তীতে সড়কটিতে ইটাসংস্কার ছাড়া কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ সড়কটি গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গী-পূবাইল সড়কের কলেজগেটে এসে জয়দেবপুরকে সংযোগ করেছে। কালীগঞ্জ উপজেলা ও পূবাইলের অনেকেই বিভিন্ন কাজে জেলা শহর গাজীপুরে যেতে এ সড়কটি ব্যবহার করেন। কিন্তু বছরের পর বছর রাস্তাটি খানাখন্দে বেহাল থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে ১০-১৫টি শুটিং স্পট, রিসোর্ট ও কলকারখানা। শুটিং ও পিকনিকে আসা গাড়িগুলোকে প্রায় সময়ই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।
এছাড়া সদর হাসপাতালে যেতে প্রসূতি মায়েরা এ রাস্তা ব্যবহার করতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
সরেজমিনে ৪১নং ওয়ার্ডের ভাদুন এলাকার সেতুটিতে গিয়ে দেখা যায়, ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ লেখার একটি লেমিনেশন করা একটি নোটিশ কার্ড ঝুলিয়ে দায় সেরেছে সিটি কর্পোরেশন। যদিও নিষেধ উপেক্ষা করে দিনে হাজার হাজার ভারী ও হালকা যানবাহন চলাচল করছে ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুটি দিয়ে।
এলাকাবাসী বলছেন, ফাটল ধরা, সেতুর মাঝখানে গর্ত হওয়া ও জরাজীর্ণ পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় যে কোনো সময় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সেতুর নিচে গিয়ে দেখা যায়, মাঝখানের একটি গর্ত দিয়ে আকাশ দেখা যাচ্ছে। ভারী যানবাহনের ভারে যে কনো সময় ধসে যেতে পারে সেতুটি।
পূবাইল-জয়দেবপুর রোডের লেগুনাচালক নিতাই চন্দ্র বলেন, রাস্তাটি ও সেতুটি মেরামত না করায় প্রায়ই গাড়ি উল্টে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঝাঁকুনিতে যাত্রীরা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ভাদুন এলাকার এ সেতুটি ছাড়াও কলেজগেট-জয়দেবপুর সড়কে আরও দুটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু রয়েছে। এর মধ্যে একটি ইছালি সেতু ও অন্যটি বাঙালগাছ সেতু। এ সেতু দুটির অবস্থাও জরাজীর্ণ। মেরামত না করলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
লেগুনা যাত্রী আবদুল মালেক বলেন, গাজীপুর সিটির বর্তমান মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কাছে আমাদের প্রত্যাশাটা অনেক বেশি, কিন্তু সিটিতে রাস্তাঘটের উন্নয়নের জোয়ার বইলেও গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ সেতু তার চোখে পড়েনি বলে মনে হয়।
এ সড়কে চলাচলকারী দলিল লেখক শহিদুল ইসলাম বলেন, হাজারও যাত্রী ও ভারী যানবাহন চালকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলাচল করছে। যে কোনো সময় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।
এ সড়কে চলাচলকারী নিয়মিত যাত্রী পূবাইল ভূমি অফিসের তহসিলদার জাবেদ সারোয়ার জানান, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিস করতে হয়। রাস্তাটি ও ঝুকিপূর্ণ সেতু তিনটি স্থায়ীভাবে মেরামত করলে জেলা শহরে যাওয়ার যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরবে।
সিটির ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমেন মিয়া বলেন, শিগগিরই ভাদুন এলাকার সেতুটির কাজ ধরব। দুদিন আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের ইঞ্জিনিয়ার জামাল উদ্দিন এসে সেতুটি দেখে গেছেন বলে জানান তিনি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পূবাইল এলাকার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী প্রকৌশলী (গাছা জোন) জামাল উদ্দিন জানান, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু তিনটি ও সড়কটি ৬০ ফুট প্রসস্তকরণসহ দ্রুত কাজ ধরা হবে।