বগুড়ার শেরপুরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা চালানোর অভিযোগ উঠেছে পাষণ্ড স্বামী বিরুদ্ধে। আগুনে দগ্ধ ওই গৃহবধূর নাম অঞ্জলি খাতুন (১৯)। বৃহস্পতিবার (১১মার্চ) সকালে এই পৈশাচিক ঘটনায় শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ঘটনার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই গৃবধূকে উদ্ধার করে বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। আগুনে তাঁর শরীরের ৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। ঝলসানো শরীর নিয়ে হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ছটফট করছেন গৃহবধূ অঞ্জলি।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের হাপুনিয়া গ্রামের উজ্জল হোসেনের মেয়ে অঞ্জলি খাতুন। প্রায় একবছর আগে পাশ্ববর্তী শাজাহানপুর উপজেলার বিষ্ণপুর গ্রামের বাবলু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ বুলবুল মিয়ার (২৫) সঙ্গে তাঁর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। কিছুদিন ভালোই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। তবে সম্প্রতি যৌতুকের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে টাকা ও জিনিসপত্র দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা দ্রুত পরিশোধে চাপ দেন পাষণ্ড স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন। কিন্তু যৌতুকলোভী স্বামীর দাবি পুরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায়ই অঞ্জলি খাতুনের উপর শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালানো হতো। একপর্যায়ে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মাস খানেক আগে স্বামীর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি চলে আসেন তিনি।
এদিকে গতকাল বুধবার (১০মার্চ) দুপুরের দিকে বুলবুল মিয়া শেরপুর উপজেলার হাপুনিয়া গ্রামে শ্বশুড়বাড়িতে এলে আগের বিষয়গুলো নিয়ে তাদের স্বামীর-স্ত্রীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এসময় ওই বাড়িতে পরিবারের অন্যরা কেউ ছিলেন না। এই সুযোগে যৌতুকলোভী পাষণ্ড স্বামী পুড়িয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে শয়নকক্ষে তার স্ত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দরজা-জানালা আটকে দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় বলে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
তবে অভিযুক্ত স্বামী বুলবুল মিয়া ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের দাবি, নিজের শরীরে নিজেই আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে অঞ্জলি খাতুন। এছাড়া তার কাছে কোনো যৌতুক চাওয়া হয়নি। তাই শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন চালানোর প্রশ্নই ওঠে না। তবে কেন অঞ্জলি নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালালো-এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান তারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার ওসি শহিদুল ইসলাম শহিদ বলেন, ঘটনাটির খবর পেয়েই আমি ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) গাজিউর রহমান স্যার ঘটনাস্থলে যাই। এরপর হাসপাতালে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ ওই গৃহবধূ ও তার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। ঘটনাটি নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই রহস্য উম্মোচিত হবে।
এছাড়া ঘটনাটি নিয়ে এখনো মামলা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।