কক্সবাজারের চকরিয়ায় টানা বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অন্তত ৮০ শতাংশ এলাকা বানের পানিতে ভাসছে। এই অবস্থায় গত দুইদিন ধরে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছে পরিবার সদস্যদের নিয়ে।
করোনাকালীন এই পরিস্থিতিতে বানভাসি মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে সরকার। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকটে থাকা বানভাসি মানুষগুলোর মাঝে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার হিসেবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চিড়া, গুঁড়, মুড়ি, খেঁজুর, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে ১১০ টন জিআর চাল।
এদিকে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলমের পক্ষ থেকে গত দুইদিনে অন্তত ২০ হাজার পরিবারকে রান্না করা বিরিয়ানি এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদীর পক্ষ থেকে তিন হাজার পরিবার, চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীর পক্ষ থেকে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের সাত হাজার পরিবার, মেয়রপ্রার্থী ও বর্তমান কাউন্সিলর জিয়াবুল হকের পক্ষ থেকে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারের মাঝে রান্না করা খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার, ডুলাহাজারা ইউনিয়নে হাসানুল ইসলাম আদরের পক্ষ থেকে প্রায় চার হাজার পরিবারে শুকনো খাবার বিতরণসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেও রান্না করা ও শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহতভাবে চলছে।
অপরদিকে রান্না করা খাবারের প্যাকেট নিয়ে নৌকায় চেপে বন্যাকবলিত গ্রামে গ্রামে গিয়ে বাড়িতে রান্না করা খাবার পৌঁছে দিচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠন স্বাধীন মঞ্চসহ কয়েকটি সংগঠন।
স্বাধীন মঞ্চ এর স্থায়ী পরিষদ সদস্য তানভীর আহমদ সিদ্দিকী তুহিন জানিয়েছেন, করোনাকালীন আকষ্মিক এবারের ভয়াবহ বন্যায় খাবার সংকটে পড়া দরিদ্র পরিবারগুলোতে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় দুই হাজার মানুষকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। যাতে কোনো পরিবারের সদস্য অভুক্ত না থাকেন।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকা বানের পানিতে ভাসছে। এই পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের মাঝে বিতরণের জন্য দুইদফায় ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১১০ টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনো খাবার হিসেবে তাৎক্ষণিক বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে ১২০ বস্তা চিড়া, ১০০০ কেজি গুঁড়, ২০০ কেজি খেঁজুর, প্রয়োজনমতো পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। এসব খাবার আমি নিজেও গ্রামে গ্রামে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছি বন্যার্তদের মাঝে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম বলেন, ‘এবারের বন্যায় যাতে কোনো মানুষ অভুক্ত না থাকেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে সরকারিভাবে। এ ছাড়া আমি ব্যক্তিগতভাবে বুধবার রাত থেকে অদ্যাবদি প্রায় ২০ হাজার পরিবারে রান্না করা এবং শুকনো খাবার পৌঁছে দিচ্ছি বন্যার্তদের কাছে। আমার এই প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চলবে।