চা বাগানের সবুজ বুকের আড়ালে আছে পাতা কুঁড়ি তোলার অনেক গল্প। বাগানে নারী শ্রমিকরাই বেশি কাজ করেন। সকাল থেকে ছাতা চুপড়ি নিয়ে বের হন সংসারের কাজ কর্ম শেষ করে। রোদে পুড়ে আর বৃষ্টিতে ভিজে তারা টিলায় টিলায় কাজ করেন। ক্লান্ত দুপুরে পাতি চখা বা পাতি চাটনি খেয়ে দুর্বল স্নায়ু আবার সবল করে নেন। আবার শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। পড়ন্ত বিকেলে ওজন ধারের কাছে তোলা পাতার হিসাব দিয়ে ফিরে যান ঘরে।
চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাপেন নামক উপাদান। এ পাতা হাতের মলায় ক্যাপেন তৈরি হয়। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পাতিচখা বা চা-পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সাথে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে তৈরি হয় পাতি চখা।
নারী শ্রমিকদের দলের সর্দারনি সকলের কাছ থেকে রুটি, পিঁয়াজ, মুড়ি, রসুন, চানাচুর, পোড়া আলুসহ পাতিচখার উপকরণ সংগ্রহ করেন। একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চাপাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে মলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। সর্দারনি আবার সকলের হাতে হাতে বণ্টন করেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলত। ১৮৪০ সালে যখন চীন থেকে চায়ের বীজ এনে কলকাতা বোটানীক্যাল গার্ডেনে পরীক্ষামূলকভাবে চায়ের চাষ শুরু হয় এরপর ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্রে ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশে চট্টগ্রামে প্রথম কর্ণফুলী চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূল পরিবেশের কারণে দেশের সিংহভাগ চা বাগান সিলেট ও চট্টগ্রামে সৃষ্টি হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা গাছের পরিচর্যার জন্য সস্তা দরে বঞ্চিত আদি জনগোষ্ঠীর মধ্যে থেকে এখানে শ্রমিক আনা হয়।
এ জনগোষ্ঠী আদিকাল থেকে চাষাবাদে লিপ্ত ছিল। কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতিতে রুটি খাওয়া ছিল তাদের পুরানো প্রথা। চা বাগানে কাজ করতে এসে তারা পুরানো প্রথাকে আজও ধরে রেখেছে। সময়ের ব্যবধানে শুধু রুটি খাওয়াটাকে পছন্দ করেনি অনেকে। মনের খেয়ালে চা-গাছের কচি পাতা হাতের তালুতে ডলে রুটির সাথে খাওয়া শুরু করেন তারা।
চায়ের কাঁচা পাতা রুটির সাথে মিশিয়ে খাওয়ার পর শারীরিক ক্লান্তি দূর হয়ে কর্মস্পৃহা জাগে। শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সাথে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সাথে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদান। শ্রমিকদের ভাষায় চা-পাতি ভর্তা। এর বর্তমান নাম পাতি চখা।